প্রশ্নহীন পোড়াবৃক্ষ

একা শহরে দাঁড়িয়ে আছি আমি

বাজ পড়ে পুড়ে যাওয়া পাতাহীন গাছ,

কখনো নড়ে উঠি ভুকম্পনে কিংবা

দেখি কখন বেখেয়ালে ঘুনপোকা খেয়েছে

কেন্দ্রিয় শাঁস, পাঁজরের অবকাঠামো;

ক্ষণিক বৃষ্টি হলে জংধরা ডালপালা ঝরঝর ঝরে পড়ে,

প্রবল হাওয়ার লুকোচুরি হাড়ে লাগায় টক্কর,

চিন্তাজ্বরে কেঁপে কেঁপে মৃত্যুর সাথে লড়ি বিশ্রী বামন;

বিদ্রোহি ক্রীতদাসের বেড়ি পরানো দুপায়ের মতো

আমার আয়ু ও চোখে হাতকড়া বাঁধা,  

কোথায় পালাবো আমি;

কাগুজে ঠোঙার মাঝে বন্দি মাছির মতো 

ঘ্যান ঘ্যান সুর তুলি

এই বাঁকা রাজপথে

পরহিংসা সাধক।

 

গোল গোল চাকার ধুলো গায়ে মুখে মেখে

কাঁধে ঝুলিয়ে বড়সড় ঝোলা,

এক ছড়ি কিনে কাঁচকলা

হেঁটেছি হাজারো যুগে;

চিরসাথি সেই ঝোলার পেট ভরতে গিয়ে ছেড়েছি ভিটেমাটি,

জলডুবি গাঁয়ের বুড়ো আম বাগানের স্নেহ মায়া,

ছেড়েছি আরও সব প্রেমিকার কলরব;

হয়তো বা ধারাবাহিক পেছনগামী ইতিহাসের ভুলে

প্রাণরক্ষী উত্তেজনা ও প্রচলিত বংশলোভে

জন্মেই আমি লিখেছি শেওলা পড়া দেয়ালে দেয়ালে

জানি না জানি না কিছু, চিনি না চিনি না তোমায়

জন্ম যদি বঙ্গে তোমার জন্ম মা দিও না আর

থেকে গেছি আমি এক জনতা জর্জরিত

রুগ্ন শহরের ঘৃণিত তেল চিটচিটে অর্থলোভী অর্থহীন

পোড়াবৃক্ষ।

 

আলোকচিত্রের ইতিহাস: কবিতায় ব্যবহৃত আলোকচিত্রটি Nilfanion-এর তোলা চিত্র টাকার গাছ (Money tree in Swilla Glen)। এখানে চিত্রটিকে কিছুটা প্রস্থ কমিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে। চিত্রটি ব্রিটিশ টাকালোভীদের মানসিকতা দেখা যাচ্ছে।

আরো পড়ুন:  ভুমিতে থাকা স্বপ্ন

Leave a Comment

error: Content is protected !!