তৃতীয় পক্ষের গমনাগমন

ক্ষণে ক্ষণে টের পাই তোমার ত্রিসীমানায়

আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা পড়ে আছি;

পথ নেই ছেড়ে যাবার;

ইতিহাস শিক্ষা দেয় একদিন প্রয়োজন ফুরাবে,

কেননা ইতিহাস সবকিছু পাঠায় ধ্বংসকুপে

তুমি-আমি-কংকাল-রাজপ্রাসাদ-সভ্যতা-কৃষ্ণগহ্বর;

ইতিহাস পাঠায় ধ্বংসকুপে মরণের স্পন্দনে চলমান

প্রাণের ঘূর্ণায়মান সুতা ছিঁড়ে ছুটে চলা অবিরাম

বিড়বিড় আউলা প্রলাপ বকা ঘুড়ি।

সেই ঘুড়ি আমার ছাদ হতে পৌঁছে যায় তোমার অলিন্দে;

আমাকে পৌঁছে দেয় তোমার কল্পনার ফুলবাগানে,

কল্পফুল তুলে আমি রেখে দেই তোমার করতলে

আঙিনায় বিছানায় জানালার বৃষ্টিতে মরীচিকার মতো

ঝিকমিক করা তোমার চোখের প্রিজমে।

 

তোমার অসময়ের সাময়িক উপস্থিতির অনুভূতি

আমাকে রেখেছে প্রবল টানের মাঝখানে,

আমি একধরনের রুদ্ধশ্বাস সাবলীলতার সঙ্গে

ভেসে বেড়িয়েছি কল্পনার মহাজাগতিক রশ্মিতে,

অনুভবে জেনেছি শব্দ ও প্রশান্তির

সবুজ কারুকাজে ঘেরা সকালের ফুটন্ত ফুলের বাগান।

হঠাত হাঁটাপথে তোমার হাসি শুনে জেনে ফেলি আশপাশে

রেখেছো ছড়িয়ে ইথারের মতো তোমার আগ্রহী বিস্তার;

আরেকজন উঁকি মারে নবীন পুজারি সেজে

তোমার বর্ণিল জানালায়;— নিরাবেগ নির্ভার ছিল না সে,

নজর রাখে তোমার প্রাঙ্গনের চারিদিকে,

ধীরে ধীরে খাপ খাইয়েছে নিজেকে

তোমার কৌশলের সাথে?

আমি আর সে— মাঝখানে তুমি

বিপরীত দুজনের আঙিনায় অবাক সেতু।

তবুও আশা রাখি কখন কোন ভূমিকম্প এসে

বদলে ফেলে মানুষের চিন্তাজাল।

কী ছিলে তুমি পৃথিবীর কাছে?

স্বাভাবিক সহজাত সতেজ প্রেমিকা;—

তোমার চোখের আলো আমার চারপাশে

গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল প্রখর রোদে পিচঢালা

পথের উপর বিস্তীর্ণ সামুদ্রিক ঢেউয়ের মতো;

আমাদের দিন আর রাত্রিগুলো আলো আর ছায়ার মতো

কেটে যাচ্ছিলো এক সাথে হ্রস্ব হাসির খিলখিল শব্দে

আর সাপের মতো এঁকে বেঁকে পিছলে যাওয়া রাতে

তুমি রেশমের মতো কোমল, উইলো শাখার মতো মসৃণ আর

জেলির মতো আদুরে হয়ে আমার বুকে পড়ে থাকতে, স্বপ্ন আঁকতে;

অথচ শেষ প্রহরের মেয়ে তুমি রক্ত জল মেঝেতে লেপ্টিয়ে

আরো পড়ুন:  তুমি আমাদের জীবনের অংশ

চলে গেছো আমার আঙিনা ছেড়ে

একপথ চলা পথিক তুমি— স্থিতিহীন ফিরতে জান না।

 

আর যদি কেউ আসে কোনোদিন আমার বৈঠক ঘরে

বৈঠা হাতে নিয়ে ভালোবাসে রূপহীন ছায়াহীন

দৈর্ঘ প্রস্থ বেধহীন আমার সাধারণ ঘর,

তবে পাবে চুলের মধ্যে সুন্দর মেঠো মেঠো গন্ধ,

নাটকীয় সূর্যাস্ত কিংবা নায়াগ্রা জলপ্রপাতের দিকে

চুপ করে তাকিয়ে থাকা প্রেমিক যুগলের মূর্তি।

 

তুমি চলে যাও, চলে যেতে পারো, তবে রেহাই পাবে না

তাদের হাত থেকে যারা চোখ বুঁজে খুলে দেয় অসত্যের দ্বার,

কেউই রেহাই পাবে না বেনো জলের মতো ঢুকে পড়া

কাদা ও গোবরের হাত হতে,

মর্গে হাসপাতালে বা পুলিশ ফাঁড়িতে

তারা খুঁজে ফিরবে বন্ধু বা আত্মীয়ের লাশ,

হয়তো এসবের মাঝখানে আমাকে প্রাণহীন খুঁজে পাবে

তোমাকেও পেতে পারে।

শুধু পাবে না আমার বাণী, আনন্দ স্পর্শ, জন্ম সুসংবাদ,

প্রাণবান প্রীতির আলো, হাতে হাতে সহযোগিতার আংটি বদল

দুর্বাফুলের কুঁড়ি আর প্রাকৃতিক দৃশ্যের পটভূমি।

 

আলোকচিত্রের ইতিহাস: কবিতায় ব্যবহৃত আলোকচিত্রটি Diego Torres Silvestre-এর তোলা। তারিখ ২২ ডিসেম্বর ২০০৯। এখানে চিত্রটিকে বামে ডানে সামান্য ছেঁটে ব্যবহার করা হয়েছে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!