জলঢাকা নদী বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী

জলঢাকা নদী (ইংরেজি: Jaldhaka River) বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের লালমনিরহাট জেলার এবং পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২০৯ কিলোমিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। নদীটিতে জোয়ার ভাঁটার প্রভাব থাকে না। জলঢাকা নদী মূলত ধরলা নদীর উপনদী যা ধরলা নদীর বাম তীরে এসে মিলিত হয়েছে।

প্রবাহ: ৪,৪০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত সিকিমের বিদাং হ্রদ থেকে উৎপত্তি হয়ে এই নদীটি সিকিম, ভুটান, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রংপুর জেলায় যমুনায় মিশেছে। ২০৯ কিলােমিটার দীর্ঘ এই নদীটির ১৪৪ কিমি গতিপথ জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। ৫০২০ বর্গকিমি বিস্তৃত জলঢাকা অববাহিকার ৭৫ শতাংশ এলাকা পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে অবস্থিত। সিকিমে জলঢাকার অন্য নাম ডিচু। অসমখােলা, ডিচু ও বিন্দুখােলা মিলেমিশে জলঢাকা নাম নিয়েছে এবং পরে প্রায় ১৯ কিমি পথ ভুটান-পশ্চিমবঙ্গের সীমানা ধরে প্রবাহিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করার পর জিতি নদী জলঢাকায় মিশেছে। জলপাইগুড়ি জেলায় জলঢাকা নদী ধনুকের মতাে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বেঁকে গেছে এবং তার চলার ফলে অনেকগুলি উপনদী এসে মিশেছে। এইগুলির মধ্যে ডায়না, মূর্তি, দুধুয়া, মুজনাই, সুতাঙ্গা, ধরলা, গিরধারী বিশেষ উল্লেখযােগ্য।[১]

হিমালয় থেকে জলপাইগুড়ির সমভূমিতে নেমে আসার পর জলঢাকার ঢাল জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারে অনেক কমেছে। এত কম ঢালের জন্য পাহাড় থেকে বয়ে-আনা কাকর, বালি, পাথর নদী আর বহন করে নিতে পারে না। এক সমীক্ষায় প্রকাশ, বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে বর্ষাকালে জলঢাকা নদী দিয়ে প্রায় ৩.৮০ লক্ষ কিউসেক জল বয়ে যায় আর এই জলে ভেসে আসে প্রায় ৫১ লক্ষ টন পলি। সমভূমিতে নদীর চলার পথ তাই অগভীর— এখানে নদী বারে বারে গতিপথ বদলায়, নতুন বাঁক তৈরি করে— কখনাে-বা দুটি শাখা ভাগ হয়ে যায়। এই অস্থিরতা নদীর সহজাত।

জলঢাকা নদী উত্তরবঙ্গের একটি প্রধান নদী। নদীতে সারা বছর পানি প্রবাহ থাকে, তবে বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। বর্ষায় নদীতে স্রোতধারা বৃদ্ধি পেলে তীরবর্তী এলাকা যেমন বন্যাকবলিত হয়, তেমনি ভাঙনের আলামত পরিদৃষ্ট হয়। শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ কিছুটা কমে যায়। পলির প্রবাহে এ নদীর তলদেশ ক্রমশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে এবং প্রবাহের মাত্রাও অতীতের তুলনায় হ্রাস পাচ্ছে।

আরো পড়ুন:  তীরনই নদী বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলার একটি নদী

এই নদীর তীরে বেতগাড়া, তেপথী বাজার, কেসরহাট, সোনারডাঙ্গা, মাথাভাঙ্গা, টেকোনিয়া একো পার্ক সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ জনপদ অবস্থিত। এই নদী অববাহিকায় সেচের জন্য কোনো জল সংরক্ষণ করা হয় না। এই নদীতে কোনো রেগুলেটর নেই বা কোনো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নেই। এই নদীর উপর পশ্চিমবঙ্গের প্রাদেশিক মহাসড়ক ১৬-এর জন্য মানসাই ব্রিজ, জাতীয় মহাসড়ক ২৭-এর জন্য ১টি ব্রিজ ছাড়াও ছাড়াও অনেকগুলো ব্রিজ আছে।

আলোকচিত্রের ইতিহাস: পশ্চিমবঙ্গের নাগরকাটায় জাতীয় মহাসড়ক এনএইচ৩১সি থেকে তোলা জলঢাকা নদীর প্রবাহপথের এই আলোকচিত্রটি গ্রহণ করেছেন অনুপ সাদি ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে।

তথ্যসূত্র

১. কল্যাণ রুদ্র, বাংলার নদীকথা, সাহিত্য সংসদ, প্রথম প্রকাশ দ্বিতীয় মুদ্রণ, জানুয়ারি ২০১০, কলকাতা, পৃষ্ঠা ৭৬। 

Leave a Comment

error: Content is protected !!