অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ (ইংরেজি: Continent of Australia) অস্ট্রেলিয়ার মহাদেশীয় প্লেটের স্থলভূমিব্যাপী গঠিত পৃথিবীর দক্ষিণ ও পূর্ব গোলার্ধে অবস্থিত। কখনও কখনও এটিকে অস্ট্রেলিয়া রাষ্ট্র থেকে আলাদা করার জন্য সাহুল, অস্ট্রেলিনিয়া বা মেগনেসিয়া নামে পরিভাষাগত প্রসঙ্গে পরিচয় করানো হয়। এই মহাদেশের মধ্যে রয়েছে মূল ভূখণ্ড অস্ট্রেলিয়া, তাসমানিয়া এবং নিউ গিনি দ্বীপ; নিউ গিনি আবার পাপুয়া নিউ গিনি এবং দুটি ইন্দোনেশিয়ান প্রদেশ সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে। ওশেনিয়ার ভৌগলিক অঞ্চলে অবস্থিত, এই মহাদেশটি ইংরেজি ধারণায় গ্রহণযোগ্য সাতটি ঐতিহ্যবাহী মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে ছোট মহাদেশ।
ওশেনিয়া শব্দটি মূলত বিশ্বের একটি “বড় বিভাগ”, যা ১৯৫০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়া ধারণার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল। আজ ওশেনিয়া শব্দটি প্রায়শই অস্ট্রেলিয় মহাদেশ, জিল্যান্ডিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরের বিভিন্ন দ্বীপগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে বিস্তৃত অঞ্চলটিকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। ওশেনিয়া সাত মহাদেশের মডেলের অন্তর্ভুক্ত নয়।
অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের অন্তর্গত একটি দেশ পাপুয়া নিউ গিনি বিশ্বের সর্বাধিক সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত দিক থেকে বৈচিত্রপূর্ণ দেশ। এটি সর্বাধিক পল্লী অঞ্চল অধ্যুষিত এলাকার মধ্যে একটি, কারণ এর ১৮ শতাংশ মানুষ শহুরে কেন্দ্রগুলিতে বাস করেন। ইন্দোনেশিয়ার একটি প্রদেশ পশ্চিম পাপুয়ায় আনুমানিক ৪৪টি নাগালের বাইরের নৃগোষ্ঠীর বসবাস। এই মহাদেশের বৃহত্তম ভূমি অধ্যুষিত অস্ট্রেলিয়া দেশটি অত্যন্ত নগরায়িত। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মানব বিকাশের সূচকে অবস্থান করছে এবং সারা বিশ্বের ১৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির রাষ্ট্র। অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বের নবম বৃহত্তম অভিবাসী জনসংখ্যাও রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, নিউ গিনি এবং ঠিক পূর্ব দিকের বড় দ্বীপপুঞ্জের লোকেরা ৫০,০০০ থেকে ৩০,০০০ বছর আগে এসেছিল।
১৬শ শতকের গোড়ার দিকে অস্ট্রেলিয়া আবিস্কৃত হলে সেখানে উপনিবেশ স্থাপন করা হয়। অস্ট্রেলীয় কমনওয়েলথই এই অঞ্চলের বৃহত্তম রাষ্ট্র। এটি ব্রিটিশ কমনওয়েলথের সদস্য ও একটি উন্নত পুঁজিবাদী দেশ। অস্ট্রেলীয় কমনওয়েলথ কতকগুলি দ্বীপ-উপনিবেশের দখলদার।[১]
নিউজিল্যান্ডও একটি উন্নত পুঁজিবাদী দেশ এবং প্রশান্ত মহাসাগরে তারও উপনিবেশ আছে। এসব উপনিবেশের মধ্যে কুক ও কেলাউ দ্বীপপুঞ্জ উল্লেখ্য।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলির বাসিন্দারা ঔপনিবেশিক শাসন উৎখাতের জন্য সংগ্রাম করছে। ১৯৬২ সালে পশ্চিম সামােয়া ওশেনিয়ার প্রথম স্বাধীনতাপ্রাপ্ত রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করে। অতঃপর ১৯৬৮ সালে নাউর, ১৯৭০ সালে টঙ্গো, ফিজি এবং ১৯৭৫ সালে পাপুয়া-নিউ গিনি, আরও পরে সােলােমন দ্বীপপুঞ্জ ও ট্রুভালো স্বাধীনতা পায়।
তথ্যসূত্র:
১. কনস্তানতিন স্পিদচেঙ্কো, অনুবাদ: দ্বিজেন শর্মা: বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভূগোল, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, বাংলা অনুবাদ ১৯৮২, পৃ: ২৪।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।