পৃথিবী বা দুনিয়া (ইংরেজি: Earth) সূর্য থেকে তৃতীয় গ্রহ এবং একমাত্র জ্যোতির্বিজ্ঞানীয় বস্তু যেখানে জ্ঞানত জীবনের অস্তিত্ব বিরাজমান। রেডিওমেট্রিক তারিখায়ন এবং প্রমাণের অন্যান্য উৎস অনুসারে, পৃথিবীটি ৪৫০ কোটি বছর আগে গঠিত হয়েছিল। সূর্য থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১৫ কোটি কিলােমিটার। পৃথিবীর অন্য আরেকটি নাম “বিশ্ব” বা “নীলগ্রহ”। পৃথিবীর ন্যায় সূর্যের আরও ৮টি গ্রহ ও তাদের উপগ্রহ নিয়ে সৌরজগৎ গঠিত। সৌরজগতে পৃথিবীর তুলনামুলক দূরত্বে অবস্থানের কারণে এটি বৈশিষ্ট্যপূর্ন আকার আকৃতি ধারণ করেছে। এ সবই পৃথিবীর অবস্থানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অবস্থানগত দিক দিয়ে পৃথিবী মঙ্গল গ্রহের চেয়ে সূর্যের কাছাকাছি একটি কক্ষপথে পরিভ্রমন করে। এই বিশেষ অবস্থানের জন্যই পৃথিবীর গঠন, উত্তাপ, বায়ুমন্ডলের চাপ প্রভৃতি প্রাণীজগতের জীবন ধারণের পক্ষে বিশেষ উপযুক্ত। বর্তমান কক্ষপথের চেয়ে পৃথিবী যদি সূর্যের আরাে কাছাকাছি পথে পরিভ্রমন করত তাহলে পৃথিবীর তরল পানি সব বাষ্পীভূত হয়ে পৃথিবী পানি শূন্য গ্রহে পরিণত হত। আবার যদি পৃথিবী তার বর্তমান অবস্থান থেকে আরাে দুরে অবস্থিত হত তবে সমস্ত পানি বরফে পরিণত হয়ে পৃথিবীকে জীবশূন্য জগতে পরিণত করত। কাজেই বর্তমান অবস্থানই জীবজগতের জন্য প্রকৃতপক্ষে উপযুক্ত।
এছাড়া, পৃথিবীর আয়তনগত বৈশিষ্ট্যের কারনে এর অভ্যন্তরভাগ আধা গলিত আঠালাে অবস্থায় আছে। এই আধাগলিত আঠালাে পদার্থই আগ্নেয় পদার্থের অন্যতম উৎস। তাহলে বলা যায় পৃথিবী সূর্যের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত।
পৃথিবী হঠাৎ করে অল্প সময়ে আজকের এই পৃথিবীতে পরিণত হয়নি। বিবর্তনের নানা পর্যায় পার হয়ে আজকের পৃথিবী। বিভিন্ন পর্যায়ে বারিমন্ডল ও বায়ুমন্ডল সৃষ্টি হয়েছে। এই মন্ডল দুটি পৃথিবীর উপরিভাগে অবস্থিত। পৃথিবীর উপরিভাগ অশ্মমন্ডল নামে পরিচিত। অশ্মমন্ডল কঠিন পদার্থ দ্বারা আবৃত। অশ্বমন্ডলের গঠন এবং উৎপত্তি পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগের সঙ্গে সম্পর্কিত।
ভূ-অভ্যন্তরের গঠন ও উপাদান
পৃথিবী প্রথম অবস্থায় একটি জ্বলন্ত বাষ্পপিন্ড ছিল। তখন পৃথিবী বিভিন্ন প্রকার গ্যাসের সমন্বয়ে গঠিত ছিল। ক্রমে পৃথিবী ঠান্ডা হতে শুরু করে এবং গ্যাসীয় অবস্থা থেকে তরল অবস্থায় রূপ নেয়। ফলে ভারী পদার্থগুলি পৃথিবীর কেন্দ্রে এবং হালকা পদার্থগুলি পৃথিবীর উপরের দিকে জমা হতে থাকে। এভাবে একটির পর একটি পদার্থ জমা হয়ে ভূ-অভ্যন্তর গঠিত হয়।
গােলাকার পৃথিবীর ব্যাসার্ধ প্রায় ৬৪০০ কিলােমিটার। এর কঠিন আবরণ ভেদ করে এত গভীরে ঢুকে অভ্যন্তরের অবস্থা দেখার কোন সুযােগ নেই। খনিজ সম্পদ আহরণের জন্য এ পর্যন্ত সবচেয়ে গভীরতম কূপ মাত্র ৮ কিলােমিটার ভূ-অভ্যন্তর পর্যন্ত প্রবেশ করতে পেরেছে এবং ক্ষয় কার্যের ফলে মাত্র ২০-২৫ কিলােমিটার গভীরের শিলা উন্মুক্ত রয়েছে। এইজন্য বিজ্ঞানীরা ভূ-অভ্যন্তরভাগ সম্পর্কে জানার জন্য তিন ধরণের তথ্যের উপর নির্ভর করে থাকেন প্রথমত, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত থেকে প্রাপ্ত ভূ-অভ্যন্তরের শিলার নমুনা, দ্বিতীয়ত, পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের বৈশিষ্ট্য ও ঘনত্ব এবং তৃতীয়ত, ভূ-কম্পন তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য বা ভূ-কম্পন তরঙ্গের বেগ ও দিক পরিবর্তনের পরিমাপ।
ভূ-অভ্যন্তরের প্রধান স্তরসমূহ
ভূ-অভ্যন্তরভাগ প্রধানত: তিনটি স্তরে বিভক্ত। যথা (ক) কেন্দ্রমন্ডল: কেন্দ্রমন্ডল, গুরুমন্ডলের নিম্নভাগ থেকে কেন্দ্রভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত। এই স্তরের পুরুত্ব ৩,৪৮৬ কি.মি.। এর গড় ঘনত্ব প্রায় ১০.৭৮ সে.মি.। কেন্দ্রের দিকে ঘনত্ব বাড়তে থাকে। এই স্তর মােট ওজনের শতকরা ৩১.৫ ভাগ দখল করে আছে। এই স্তরটি দুই ভাগে বিভক্ত। যথা- অন্ত:কেন্দ্র ও বহি:কেন্দ্র।
খ) গুরুমন্ডল: কেন্দ্রমণ্ডলের বহি:ভাগ থেকে ভূ-ত্বকের নিম্নস্তর পর্যন্ত বিস্তৃত স্তরকে গুরুমন্ডল বলে। এটি পৃথিবীর আয়তনের শতকরা ৮২ ভাগ এবং ওজনের শতকরা ৬৮ ভাগ দখল করে আছে। ভূ-ত্বক ও গুরুমন্ডলের বহি:সীমানা পর্যন্ত ১০০ কি.মি. পুরু এ স্তরকে একত্রে শিলামন্ডল বা অশ্মমন্ডল ও বলা হয়। গুরুমন্ডলের ১০০ কি.মি. গভীরতায় আনুমানিক তাপমাত্রা ১১০০-১২০০° সেলসিয়াস। বহিঃকেন্দ্রমন্ডলের সীমানায় এ তাপমাত্রা প্রায় ৩০০০° সেলসিয়াসের কাছাকাছি।
গ) অশ্মমন্ডল: গুরুমন্ডলের উপরে অবস্থিত পাতলা শিলাস্তরকে অশ্বমন্ডল বা ভূ-ত্বক বলে। এ স্তরের গড় পুরুত্ব ২০ কি.মি.। ভূকম্পন তরঙ্গ থেকে জানা গেছে যে, মহাদেশীয় ভূ-তৃক মেকিক ও ফেলমিক নামক পৃথক শিলাস্তরে গঠিত। ভূতুকের নিচের দিকে প্রতি কিলােমিটারে ৩০° সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।