দক্ষিণ আমেরিকা (ইংরেজি: South America) পশ্চিম গোলার্ধে অবস্থিত পৃথিবীর একটি মহাদেশ। উত্তর গোলার্ধের তুলনামূলকভাবে ছোট অংশসহ এই মহাদেশের বেশিরভাগ অঞ্চল দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত। আমেরিকার স্প্যানিশ এবং পর্তুগিজ ভাষী অঞ্চলে এটিকে কীভাবে দেখা হয় তার ভিত্তিতে, এটি উভয় আমেরিকার উপমহাদেশ হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। বিশেষত ব্রাজিলের উত্থানের ফলশ্রুতিতে ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনশীলতার কারণে অন্যান্য অঞ্চলের পরিবর্তে দক্ষিণ আমেরিকা বা লাতিন আমেরিকা বা দক্ষিণ শঙ্কু’র উল্লেখ গত দশকগুলিতে বেড়েছে।
দক্ষিণ আমেরিকায় স্বাধীনতা সংগ্রাম বিজয়ের পর বিজয় অর্জন করছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এখানে নতুন জাতীয় রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটেছিল। এর মধ্যে রয়েছে বারোটি সার্বভৌম রাষ্ট্র রয়েছে এবং সেগুলো হচ্ছে যথাক্রমে আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, ব্রাজিল, চিলি, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, গায়ানা, প্যারাগুয়ে, পেরু, সুরিনাম, উরুগুয়ে এবং ভেনিজুয়েলা।
দক্ষিণ আমেরিকার আয়তন ১৭,৮৪০,০০০ বর্গকিলোমিটার (৬,৮৯০,০০০ বর্গ মাইল)। ২০১৬ সালের হিসাবে এই মহাদেশের জনসংখ্যা ৪২ কোটিরও বেশি অনুমান করা হয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকা এলাকার পরিমাণের দিক থেকে এশিয়া, আফ্রিকা এবং উত্তর আমেরিকার পরে চতুর্থ অবস্থানে এবং জনসংখ্যায় এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার পরে পঞ্চম অবস্থানে বিরাজিত। ব্রাজিল এখন পর্যন্ত সবচেয়ে জনবহুল দক্ষিণ আমেরিকার দেশ, এই মহাদেশের অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যা ব্রাজিলে আছে। এর পরের জনসংখ্যাবহুল দেশগুলো হচ্ছে কলম্বিয়া, আর্জেন্টিনা, ভেনিজুয়েলা এবং পেরু। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে ব্রাজিল এই অঞ্চলের জিডিপির অর্ধেক কেন্দ্রীভূত করেছে এবং প্রথম আঞ্চলিক শক্তি হয়ে উঠেছে।
জনসংখ্যার বেশিরভাগ অংশ এই মহাদেশের পশ্চিম বা পূর্ব উপকূলের কাছে বাস করে, তুলনায় অভ্যন্তর এবং সুদূর দক্ষিণে খুব কম জনবসতি রয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিমাংশের ভূগোল অ্যান্ডিস পর্বতমালার দ্বারা প্রধানত গঠিত; বিপরীতে, পূর্ব অংশে উঁচু অঞ্চল এবং বিস্তৃত নিম্নভূমি উভয়ই রয়েছে। নিম্নভূমি অঞ্চলে প্রধানত যেখানে অ্যামাজন, অরিনোকো এবং পরনা নদী প্রবাহিত হয়। মহাদেশের বেশিরভাগ অংশ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে রয়েছে।
দক্ষিণ আমেরিকায় বারোটি সার্বভৌম দেশ থাকলেও এখানকার অনেকগুলো অঞ্চল সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির ঔপনিবেশিক মালিকানাধীন রয়ে গেছে। এই শেষােক্তগুলির শাসকচক্র উপনিবেশ ও পরাধীন দেশগুলিতে তাদের অবস্থান অব্যাহত রাখতে এবং পশ্চিম গােলার্ধে সাম্রাজ্যবাদের আক্রমণের পাদভূমি হিসাবে এগুলি ব্যবহারের প্রয়াস পায়। অথচ এখানে সাম্রাজ্যবাদের চূড়ান্ত আধিপত্যের যুগ অবসিত হয়েছে। পৃথিবীর অন্যান্য ভাগের মতাে আমেরিকার জাতিগুলির কাছেও মুক্তি, স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রগতির ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিত এখন উন্মােচিত।[১]
তথ্যসূত্র:
১. কনস্তানতিন স্পিদচেঙ্কো, অনুবাদ: দ্বিজেন শর্মা: বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভূগোল, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, বাংলা অনুবাদ ১৯৮২, পৃ: ২৩।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।