হাওড়া নদী বাংলাদেশ ও ত্রিপুরার আন্তঃসীমান্ত নদী

হাওড়া নদী বা হাওরা নদী (ইংরেজি: Haora River) বাংলাদেশ ও ভারতের ত্রিপুরার একটি আন্তঃসীমান্ত নদী হিসেবে পরিচিত।[১] নদীটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা এবং ভারতের পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার একটি নদী। নদীটির বাংলাদেশ অংশের দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটার, এই নদীর ত্রিপুরা অংশের দৈর্ঘ্য ৫৩ কিলোমিটার।  নদীটির গড় প্রস্থ ৪০ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সরলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” কর্তৃক হাওড়া নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ২৪। এ নদীর কোনো শাখা বা উপনদী নেই। শুকনো মৌসুমের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের দিকে নদী অনেকটা শুকিয়ে যায়। তবে বর্ষাকালে নদীতে পূর্ণমাত্রায় পানি প্রবাহিত হয়। এ সময় প্রায়ই পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে নদীর তীরবর্তি এলাকার অনেকাংশ আকস্মিক বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়।[২] 

নদীটির প্রস্থ গঙ্গাসাগর সেতু এলাকায় ৪০ মিটার এবং সেখানে গভীরতা ৩.৫ মিটার। হাওড়া নদীর অববাহিকা অঞ্চলের আয়তন ৫৭০ বর্গ কিলোমিটার। নদীটিতে সারাবছর পানিপ্রবাহ থাকে না। জুলাই-আগস্টে বেশি পানিপ্রবাহের সময় প্রবাহের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৮ ঘনমিটার/সেকেন্ড। সাধারণত বন্যা হয় না।[৩] 

হাওড়া নদী-এর প্রবাহ:

হাওড়া নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার তেলিয়ামুড়া তহসিলের সার্দু কারকারি গ্রামের জংগল থেকে থেকে উৎপত্তি লাভ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার মগড়া ইউনিয়ন দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তারপর এটি একই উপজেলার গঙ্গাসাগর হয়ে ধরখার ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে উজানিসার নামক স্থানে তিতাস নদীতে পতিত হয়েছে। 

অন্যান্য তথ্য:

হাওড়া নদীর উৎসমুখ ভারত পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার ঘন জংগল এবং নদীর পতিতমুখ তিতাস নদী। প্রবাহিত জেলা হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা। নদীটির প্রবাহিত উপজেলা হচ্ছে আখাউড়া। নদীটির প্রবাহের প্রকৃতি মৌসুমি এবং জোয়ার-ভাটা প্রভাবিত নয়। নদীটি বন্যাপ্রবণ। বাংলাদেশে রয়েছে নদীটির ‘হাওড়া নদী প্রকল্প’ এবং ‘খারকোট-চৌকিমুরা খাল প্রকল্প’। নদীর তীরবর্তী স্থাপনা হচ্ছে মগড়া রাধাগঞ্জবাজার। নদীটিতে ব্যারাজ বা রেগুলেটর এবং  বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নেই।[৪] এই নদীর উপর আখাউড়া রেল সেতু রয়েছে।[৫] 

আরো পড়ুন:  বিজনী নদী বাংলাদেশ ও ভারতের ত্রিপুরার একটি আন্তঃসীমান্ত নদী

হাওড়া নদী অববাহিকার কিছু এলাকায় কুটির শিল্প বা ক্ষুদ্র শিল্প থাকার ফলে শিল্পের বর্জ্য নদীতে গিয়ে মিশছে। এছাড়াও আগরতলা শহরকে বন্যা থেকে বাঁচাতে নদীর গতিপথ বদলে ফেলা হয়েছে। নদীর গতি পথ পাল্টে দেবার কারণে পানির সঙ্গে পলি, বালি এবং অন্যান্য কঠিন বর্জ্য নদীতে জমতে জমতে হাওড়ার প্রশস্ততা অনেক কমে গেছে এবং দিনে দিনের আরো কমছে। ফলশ্রুতিতে কমছে পানির প্রবাহ। এই নদীর দুই তীর থেকে বিভিন্ন দূরত্বে মোট সাতটি ঝরার মাধ্যমে নদীতে পানি আসে, এই পানিই হাওড়া নদীকে বেগবতী রাখে। তার মধ্যে সব চেয়ে বড় ঝরার নাম হচ্ছে ঘোড়ামারা ঝরা। ঘোড়ামারা ঝরার দৈর্ঘ্য ২৪.৮৭ কিলোমিটার। সব থেকে ছোটটি ঝরাটি হচ্ছে বরদোয়াল ঝরা এবং তার দৈর্ঘ্য ৬.৮০ কিলোমিটার।[৬] 

সিলেট চট্টগ্রাম রেলপথের আখাউড়া-কসবা পূর্বাঞ্চল জল নিষ্কাশন ও ফসল চাষে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে এই নদী। সমরকৌশলের দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয় মাস খুবই অবদান রাখে এই নদী।[৭] 

তথ্যসূত্র:

১. মাসুদ হাসান চৌধুরী. “আন্তঃসীমান্ত নদী.” বাংলাপিডিয়া, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি , ১৬ জুন ২০১৪, http://bn.banglapedia.org/index.php?title=আন্তঃসীমান্ত_নদী।

২. মোহাম্মদ রাজ্জাক, মানিক (ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। “দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী”। বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি (প্রথম সংস্করণ)। ঢাকা: কথাপ্রকাশ। পৃ: ৩১২-৩১৩।

৩. বিশ্বাস, ড. অশোক, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ৩৫৪।

৪. মোহাম্মদ রাজ্জাক, পূর্বোক্ত।

৫. বিশ্বাস, পূর্বোক্ত।

৬. রায়চৌধুরী, বাপি. “সঙ্কটে আগরতলার জীবনরেখা হাওড়া নদী.” আনন্দবাজার পত্রিকা, 20 Jan. 2017, www.anandabazar.com/national/lifeline-of-agartala-is-in-crisis-1.551571.   

৭. বিশ্বাস, পূর্বোক্ত।

Leave a Comment

error: Content is protected !!