কুলিক নদী (ইংরেজি: Kulik River) বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এই নদীটি বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলা এবং পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীটির দৈর্ঘ্য ৫৮ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৬০ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা পাউবো কর্তৃক কুলিক নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ২২।[১] নদীটির রাণীশংকৈলের ভুটডাঙ্গী এলাকায় প্রস্থ ১০০ মিটার এবং সেখানে এর গভীরতা ৩০ মিটার। আর নদী অববাহিকার আয়তন ১৫০ বর্গকিমি। এই নদীতে জোয়ারভাটার প্রভাব নেই।[২]
প্রবাহ: কুলিক নদী ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের কাদোশুখা গ্রামের বিলাঞ্চল হতে উৎপত্তি লাভ করেছে। অতপর নদীটি কিছুটা দক্ষিণমুখে প্রবাহিত হয়ে নেহারা ও আরো কিছুটা দক্ষিণে দুধিয়ামনি নদীর প্রবাহ গ্রহণ করে। এরপর নদীটি একই জেলার হরিপুর উপজেলার ভাতুরিয়া ইউনিয়ন দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলায় প্রবেশ করেছে। ভারতে প্রবেশের পথে এই নদী প্রায় ৫ কিলোমিটার সীমান্ত রেখা ধরে চলেছে। ভারতে প্রবেশ করে প্রায় ৮ কিলোমিটার চলার পরে বাংলাদেশ থেকে আসা পীরগঞ্জের হাজীপুর থেকে উৎপন্ন কাহালাই নদী এর বাম তীরে এসে পড়েছে।[৩] এরপর নদীটি রায়গঞ্জের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নিশ্চিতপুর-বিশহর গ্রামে নাগর নদীতে পতিত হয়েছে।
কুলিক নদীতে সারাবছর পানির প্রবাহ থাকে। তবে ডিসেম্বর মার্চ মাসে এই প্রবাহ মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। বর্ষাকালে পরিপূর্ণ মাত্রায় পানি প্রবাহিত হয়। এ সময় নদীর বিভিন্ন অংশে বন্যার প্রভাব ও ভাঙনপ্রবণতা পরিলক্ষিত হয়।[১] বর্ষায় যখন পানিপ্রবাহ সর্বোচ্চ হয় তখন পানিপ্রবাহের পরিমাণ হয় ১১৫ ঘ্নমিটার/সেকেন্ড।[২] বর্তমানে পানি প্রবাহের পরিমাণ অতীতের তুলনায় অনেক কমে গেছে এবং নদীর তলদেশ পলির প্রভাবে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তীরে ফসলি জমির সম্প্রসারণের কারণে নদীর প্রশস্ততা ক্রমশ সংকুচিত হয়ে পড়ছে।
অন্যান্য তথ্য: কুলিক নদী ঠাকুরগাঁও সদর, বালিয়াডাংগী, রাণীশনকৈল ও হরিপুর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এই নদীটি জোয়ারভাটার প্রভাবে প্রভাবিত নয় এবং নদীতে কোনো বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নেই। নদী অববাহিকায় কোনো প্রকল্প নেই। রাণীশনকৈল পৌরসভা এই নদীর তীরে অবস্থিত।[১]
তথ্যসূত্র:
১. মানিক, মোহাম্মদ রাজ্জাক, বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি, কথাপ্রকাশ, ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ঢাকা, পৃ: ১০০-১০১।
২. ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ১৭১।
৩. ম ইনামুল হক, বাংলাদেশের নদনদী, অনুশীলন ঢাকা, জুলাই ২০১৭, পৃষ্ঠা ৪৪।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।