তিস্তা নদী (ইংরেজি: Teesta River) বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটির মোট দৈর্ঘ্য ৪১৪ কিলোমিটার, গড় প্রশস্ততা ৩ কিলোমিটার এবং প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা পাউবো কর্তৃক তিস্তা নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর হচ্ছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ৫২।[১] এই নদী অববাহিকার আয়তন ১২১৫৯ বর্গকিলোমিটার।[২]
প্রবাহ: তিস্তা নদী উত্তর সিকিমের ৬২০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত কাংসে হিমবাহ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। নদীটি সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ অতিক্রম করে বাংলাদেশের ভেতরে নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারি বন্দরের নিকট ব্রহ্মপুত্রের ধারায় নিপতিত হয়। তিস্তা চলার পথে ১৫১ কিলোমিটার সিকিমের, ১২৩ কিলোমিটার পশ্চিমবঙ্গের এবং ১২১ কিলোমিটার বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তিস্তা অববাহিকার বিস্তীর্ণ ১২১৫৯ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ৮৪ শতাংশ এলাকা ভারতে এবং বাকি ১৬ শতাংশ এলাকা বাংলাদেশে অবস্থিত। লাচেন, লাচুং, রোঙ্গিচু, রংপো, রঙ্গিত, লিশ, ঘিশ, চেল, নেওরা ও করলা তিস্তার উল্লেখযোগ্য উপনদী।[২]
গত তিন শতাব্দীতে তিস্তার দক্ষিণাংশের গতিপথ অনেক বদলে গেছে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে তিস্তার তিনটি শাখানদী ছিলো। রেনেল-এর (১৭৭৯) মানচিত্রে দেখা যায় জলপাইগুড়ির শিবগঞ্জের উত্তর-পশ্চিমে তিস্তা থেকে একটি শাখানদী নির্গত হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বয়ে যাচ্ছে। ঐ নদীটি পরে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে। একটি শাখা বেগোয়া নামে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে যমুনায় মিশেছে; অন্য ধারাটি গোঘাট নামে দক্ষিণ দিকে চলন বিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বড়াল নদীর সঙ্গে মিশেছে।
তিস্তার অন্য একটি শাখার নাম করতোয়া। নদীটি দেওয়ানগঞ্জের দক্ষিণ পশ্চিমে একটি স্থানে তিস্তা থেকে বেরিয়ে চলন বিল হয়ে বড়াল নদীতে মিশত, পরে মিলিত ধারাটি পদ্মায় মিশত।[২] ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দের অতিবৃষ্টি একটি ব্যাপক বন্যার সৃষ্টি করেছিল এবং সেই সময় নদীটি গতিপথ পরিবর্তন করে লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম এবং গাইবান্ধা জেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে চিলমারী নদীবন্দরের দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র নদে পতিত হয়। তিস্তা একসময় করতোয়া নদীর মাধ্যমে গঙ্গার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল এবং এর অংশবিশেষ এখনও বুড়ি তিস্তা নামে পরিচিত।
তিস্তার অন্য দুটি শাখানদী হল পুনর্ভবা ও আত্রাই। এই দুটি নদীরই উৎস কুমারগঞ্জে। রেনেল-এর সময় পুনর্ভবা দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে মহানন্দায় মিশত আর আত্রাই চলন বিল হয়ে বড়ালে মিশত। ১৭৮৭ সালের বন্যায় তিস্তা চিলমারীতে যমুনায় মিশলে শুকিয়ে যায় করতোয়া, আত্রাই ও পুনর্ভবা।[২]
তথ্যসূত্র:
১. মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক, বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি, কথাপ্রকাশ, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, পৃষ্ঠা ১২১-১২৩, ISBN 984-70120-0436-4.
২. কল্যাণ রুদ্র, বাংলার নদীকথা, সাহিত্য সংসদ, প্রথম প্রকাশ দ্বিতীয় মুদ্রণ, জানুয়ারি ২০১০, কলকাতা, পৃষ্ঠা ৭৪-৭৫।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।