ভাটা নদী (ইংরেজি: Vata River) বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পঞ্চগড় জেলার তেতুলিয়া উপজেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়া থানা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের একটি নদী।[১] নদীটির দৈর্ঘ্য ১৫ কিলোমিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। নদীটিতে জোয়ার ভাঁটার প্রভাব থাকে না। ভাটা নদী বেরং নদীর উপনদী যা বেরং নদীর ডান তীরে এসে মিলিত হয়েছে। এই নদীর পানির প্রবাহ ক্রমাগত কমতে থাকায় এই নদী ভাটা নামে অভিহিত হয়েছে।
প্রবাহ: ভাটা নদীটি বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলার তেতুলিয়া উপজেলার পৌরসভা অঞ্চলের নিম্নভূমি থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। তারপর নদীটি বড় বিল এলাকায় গোবরা নদীর থেকে বের হয়ে আসা একটি চ্যানেল থেকে জল সংগ্রহ করে বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত অতিক্রম করেছে। সীমানা অতিক্রম করে নদীটি উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়া থানার বড় ডাঙ্গাপাড়ায় একটি হ্রদ তৈরি করেছে। এই হ্রদ তৈরি হয়েছে ভারতের সন্ত্রাসবাদী গণহত্যাকারী কংগ্রেস-বিজেপি-সিপিএম সরকারের নদী হত্যার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। এই নদীটি ডাঙ্গাপাড়ায় তিস্তা নদী ক্যানেল, যা গজলডোবা ব্যারেজের জল প্রবাহের জন্য তৈরি, দ্বারা বাঁধা পেয়ে তার উৎসমুখ থেকে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে।
নদীটি ছোট ডাঙ্গাপাড়া থেকে এগিয়ে ঝাঁঝরি অঞ্চলে উত্তর দিকের একটি ছোট প্রবাহ গ্রহণ করে পুনরায় কিছুটা রূপ ফিরে পেয়েছে। এরপর নদীটি ভাগলপুর খাস পেরিয়ে ভগবতিতে বেরং নদীতে নিপতিত হয়েছে।
ভাটা নদীতে সারা বছর পানি প্রবাহ থাকে না, তবে বর্ষা মৌসুমে যথেষ্ট পানি প্রবাহিত হয়। নদীটি বন্যাপ্রবণ বা ভাঙনপ্রবণ নয় এবং শুকনো মৌসুমে নদীটি শুকিয়ে যায়। শুকনো মৌসুমে উজানে নদীটি শুকিয়ে যায় এবং নদীর কিছু এলাকাজুড়ে ধান চাষ করা হয়। পলির প্রভাবে এ নদী ক্রমান্বয়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে এবং পূর্বের তুলনায় এই নদীর প্রবহমানতা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে।
এই নদীর তীরে বাংলাদেশ ও ভারতের অনেকগুলো চাবাগান যথা ফারুক চাবাগান, দশভুজা চাবাগান, নিজাম চাবাগান, বিমান চাবাগানসহ অনেক চাবাগান অবস্থিত। ঝাজরি প্রাথমিক বিদ্যালয় এই নদীর তীরে অবস্থিত। এছাড়াও নদীটির এখন অনেক ছোট ছোট বাজার গড়ে উঠেছে। এই নদী অববাহিকায় সেচের জন্য কোনো জল সংরক্ষণ করা হয় না, যদিও তিস্তার জল এনে তিস্তা ক্যানাল দিয়ে সেচ দেয়া হয়। এই নদীতে কোনো রেগুলেটর নেই বা তবে ক্যানাল তৈরি করে, এটির উৎসের সাথে সংযোগকে খুন করা হয়েছে। এই নদীতে কোনো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নেই। এই নদীর উপর অনেকগুলো ছোট ছোট ব্রিজ আছে।
আলোকচিত্রের ইতিহাস: বড় ডাঙ্গাপাড়া অঞ্চল থেকে তোলা ভাটি নদীর প্রবাহ পথের এই আলোকচিত্রটি তুলেছেন আলাদীপ মনসুর নামের একজন আলোকচিত্রী সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে।
তথ্যসূত্র
১. ম ইনামুল হক, বাংলাদেশের নদনদী, অনুশীলন ঢাকা, জুলাই ২০১৭, পৃষ্ঠা ৪৫।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।
দারুন লেগেছে লেখাটি। নদীতে প্রচুর পরিমানে মাছ পাওয়া যায়।