“উপনিবেশবাদ বিরোধী কৃষক-ছাত্র আন্দোলন ও কমরেড আবদুল হক” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশের নেত্রকোনায়। জাতীয় গনতান্ত্রিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ ও জাতীয় ছাত্রদল নেত্রকোনা জেলা শাখার উদ্যোগে কমরেড আবদুল হকের ১০০ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। খবর রাজু আহমেদ প্রেরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির।
জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট, নেত্রকোনা জেলা শাখার আহবায়ক মাস্টার মতিউর রহমান খানের সভাপতিত্বে গত ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০ তারিখ বিকাল ৮.৩০ ঘটিকায় জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের কার্যালয়, কমিশনার রোড কাটলি নেত্রকোনা জেলায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট মিষ্টি বেকারী শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আলোচনা করেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট, ময়মনসিংহ জেলার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন , বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ, নেত্রকোনা জেলার সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান খান , জাতীয় ছাত্রদল নেত্রকোনা জেলা শাখার আহ্বায়ক রাজু আহমেদ। আলোচনা সভায় নেত্রকোনা অঞ্চলের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
সভায় আলোচক বৃন্দ বলেন, প্রখর মেধা সম্পন্ন আবদুল হক নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশনের তৎকালীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক কমিটির সভাপতি ছিলেন এবং কমিউনিস্ট পার্টি সদস্য ছিলেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের নাগপাশ ছিন্ন করে ভারতবর্ষের জাতীয় মুক্তি, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র ছিনিয়ে আনার লক্ষ্যে তিনি তৎকালীন ভারতবর্ষের ছাত্রসমাজে নেতৃত্ব প্রদান করেন। এ সময়ে হলওয়েল মনুমেন্ট ভাঙ্গার আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে ভারতবর্ষের ছাত্রসমাজের কাছে দ্রুত সুপরিচিত হয়ে উঠেন। সে সময়ে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাবে ভারতবর্ষেও কমিউনিষ্ট আন্দোলনের ঢেউ সৃষ্টি হয়। ছাত্র অবস্থাতেই আবদুল হক কমিউনিস্ট আন্দোলনের সাথে যুক্ত হোন।
পরবর্তী জীবনে আন্তজার্তিক কমিউনিস্ট আন্দোলনে তিনি সকল রূপের সংশোধনবাদ ও সুবিধাবাদ, টিটো মার্কা, ক্রুশ্চেভ-ব্রেজনেভ-গর্বাচেভ, ইউরোকমিউনিজম, জুচে ভাবধারা, তিন বিশ্বতত্ত্ব, মাও সেতুং চিন্তাধারা ও মাওবাদ মার্কা সংশোধনবাদ, চীনকে সামনে রেখে চীন-ভিয়েতনাম-উত্তর কোরিয়া-কিউবাকে সমাজতান্ত্রিক দেশ আখ্যায়িত করা, ট্রটস্কিবাদী অবস্থান থেকে কমরেড স্তালিনের বিরোধিতা ইত্যাদি সকল রূপের সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে নীতিনিষ্ট আপোষহীন ও আদর্শগত সংগ্রাম পরিচালনা করে তত্ত্বগতভাবে পথিকৃতের অবদান রাখেন।
আলোচনা সভায় বক্তাগণ আরো বলেন, বাংলাদেশ একটি নয়া ঔপনিবেশিক আধা-সামন্তবাদী দেশ। এদেশে কখনো গণতন্ত্র ছিলো না এবং এখনো নেই। আমাদের মতো দেশে সকল কিছুর নিয়ন্ত্রক ও পরিচালক সাম্রাজ্যবাদ।
সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের ফলশ্রুতিতে তাই সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের উচ্ছেদের সংগ্রামই হচ্ছে জাতীয় মুক্তি, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। আজকে তাই স্বৈরাচার উচ্ছেদ ও স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা পরিবর্তনের লড়াইয়ের পথ প্রদর্শক ও রাজনীতিক দিশারী হচ্ছেন মহান বিপ্লবী কমরেড আবদুল হক। আলোচকবৃন্দ বলেন, সাম্রাজ্যেবাদ সামন্তবাদের শোষনের হাত থেকে মুক্তি পেতে তথা উপনিবেশবাদ বিরোধী কৃষক ও ছাত্র আন্দোলন অগ্রসর করে নয়া-ঔপনিবেশিক দেশগুলোতে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করে নতুন সমাজ গড়ে তোলার কাজে অবদান রাখার জন্য ছাত্র সমাজের কাছে আহবান জানান আলোচকবৃন্দ।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।