নওগাঁর মহাদেবপুর থেকে ৮২টি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি উদ্ধার, পাখি ব্যবসায়ীর জেল

নওগাঁর মহাদেবপুর থেকে ৮২ পাখি মুক্তির স্বাদ পেল। গত বৃহঃপতিবার ২৬ অক্টোবর ২০১৭ সন্ধ্যায় নওগাঁর মহাদেবপুরে বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে মহাদেবপুর থানা পুলিশ ৪-৫টি বস্তা ভর্তি ৮৮টি পাখিসহ পেশাদার পাখি ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার (৪৫) কে আটক করে। পাখিগুলো মধ্যে ছিল আবাবিল, বাটানসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। বিবিসিএফ সদস্য সংগঠন প্রাণ-প্রকৃতির সভাপতি কাজি নাজমুল জানান, অনেক সময় বস্তায় আটকে থাকার কারণে অসুস্থ হয়ে ৫টি পাখি মারা গেছে, খাঁচা এনে বস্তা থেকে পাখিদের বের করে খাবার ও পানি দিয়ে প্রাথমিক সুস্থ করার চেষ্টা করা হয়েছে। পাখিগুলোর প্রাথমিক শুশ্রূষা করেন প্রাণ-প্রকৃতি সংগঠনের সদস্য ফরহাদ হেসেন, পলাশ মোল্লা, সিহাব হাসান, সাগর হেসেন, আসিকুর লেমন, খোরসেদ মোল্লাসহ অন্যান্য সদস্যরা।

বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশন (বিবিসিএফ) এর সভাপতি এস, এম ইকবাল বলেন, শীত মৌসুমের শুরুতেই কতিপয় পাখি শিকারীরা বিভিন্ন প্রকার অতিথি পাখি শিকার করে বিক্রি করে। ক্রেতারা বাড়িতে নিয়ে গিয়ে চালায় ভুরিভোজ। তারা অভিনব কায়দায় এসব পাখি শিকার করে। এতে অনেক প্রজাতির পাখি বিলুপ্ত হচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে পাখি শিকার বন্ধ ও নিরাপদ আশ্রয়স্থল সংরক্ষণ করতে হবে।

গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩০ প্রজাতির পাখি বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং অনেক প্রজাতির পাখি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে পাখি শিকার বন্ধ এবং পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল সংরক্ষণ করতে হবে। পাশাপাশি বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের সঠিক প্রয়োগ করে পাখি শিকার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

এছাড়াও তিনি বলেন পাশাপাশি বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের সঠিক প্রয়োগ করে পাখি শিকার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। পাখিসহ সকল বন্যপ্রাণী শিকার বন্ধে স্বেচ্ছায় প্রচারণা এবং বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছে বিবিসিএফ এর সদস্য সংগঠনগুলো।

শুক্রবার ২৭ অক্টোবর বিকালে মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোঃ মোবারক হোসেনকে সাথে নিয়ে উপজেলা চত্বরে পাখিদের অবমুক্ত করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন মহাদেবপুর থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ মিজানুর রহমান, থানা প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম রসুল বাবু, সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন, থানা প্রেসক্লাবের সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য আব্দুল আজিজ, বিবিসিএফ পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোঃ হেফজুল হোসেন, বিবিসিএফ সদস্য মুনসুর সরকার, বিবিসিএফ সদস্য সংগঠন প্রাণ ও প্রকৃতির সদস্যরাসহ আরো অনেকে।

আরো পড়ুন:  তাড়াশ উপজেলা, সিরাজগঞ্জ থেকে বিরল প্রজাতির হিমালয়ী শকুন উদ্ধার

পরে পাখি ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তারের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করে সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জলেহাজতে পাঠানো হয়। উল্লেখ্য, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বাংলাদেশ সরকার বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন- ২০১২ অনুযায়ী পাখি শিকার, হত্যা, আটক ও ক্রয় বিক্রয় করলে, যার সর্বোচ্চ শাস্তি ২ কারাদন্ড এবং ২ লক্ষ টাকা জরিমানা এবং বন্যপ্রাণী আটক, হত্যা, শিকার এবং ক্রয়-বিক্রয় করলে, যার সর্বোচ্চ শাস্তি ১২ বছর কারাদন্ড এবং ১৫ লক্ষ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। একই অপরাধ একাধিকবার করলে শাস্তি ও জরিমানা দ্বিগুণ হতে পারে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!