দ্বন্দ্ব সম্পর্কে

৬. দ্বন্দ্বে বৈরিতার স্থান

বিপরীতগুলোর সংগ্রামের প্রশ্নটির মধ্যে বৈরিতা কি—এই প্রশ্নটিও অন্তর্ভুক্ত। আমাদের জবাব হচ্ছে: বৈরিতা বিপরীতগুলোর সংগ্রামের একটা রূপ, কিন্তু একমাত্র রূপ নয়।

মানব ইতিহাসে শ্রেণিবৈরিতা বিরাজ করে বিপরীতগুলোর সংগ্রামের একটি বিশেষ অভিব্যক্তি রূপে। শোষক শ্রেণি ও শোষিত শ্রেণির মধ্যকার দ্বন্দ্বের কথা বিবেচনা করুন। এই দ্বন্দ্বমান শ্রেণিগুলো বহুদিন একই সমাজে সহঅবস্থান করে—সে সমাজ দাসসমাজ, সামন্তসমাজ বা ধনতান্ত্রিক সমাজ যাই হোক না কেন—এবং তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে ; কিন্তু শ্রেণি দুটির মধ্যকার দ্বন্দ্ব একটা নির্দিষ্ট স্তরে উন্নীত হওয়ার পরেই কেবল প্রকাশ্য বৈরিতার রূপ নেয় এবং বিপ্লবে পরিণত হয়। শ্রেণিবিভক্ত সমাজে শান্তি থেকে যুদ্ধে রূপান্তরের ক্ষেত্রেও একথা খাটে।

বিস্ফোরিত হওয়ার পূর্বে বোমা একটা একক সত্তা যার মধ্যে বিপরীতগুলো নির্দিষ্ট অবস্থায় সহঅবস্থান করে। বিস্ফোরণ তখনই ঘটে যখন একটা নতুন অবস্থা (জ্বলন) দেখা দেয়। যেসব প্রাকৃতিক ব্যাপার চূড়ান্ত পর্যায়ে পুরোনো দ্বন্দ্ব সমাধানের ও নতুন বস্তু সৃষ্টির জন্য প্রকাশ্য সংঘর্ষে লিপ্ত হয় সেইসব কিছুর মধ্যেই অনুরূপ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়।

এ বিষয়টি বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ দ্বারা আমরা বুঝতে পারি, শ্রেণি বিভক্ত সমাজে বিপ্লব ও বিপ্লবী যুদ্ধ অপরিহার্য; যুদ্ধকে বাদ দিয়ে সমাজ বিকাশের দ্রুত-অতিক্রমণ সম্পন্ন করা এবং প্রতিক্রিয়াশীল শাসক শ্রেণিকে উৎখাত করা অসম্ভব, আর সেজন্য জনগণের পক্ষে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করাও অসম্ভব। সমাজবিপ্লব অপ্রয়োজনীয় ও অসম্ভব —এই দাবির মতো প্রতিক্রিয়াশীলদের শঠতাপূর্ণ প্রচারের স্বরূপ কমিউনিস্টদের উদঘাটন করে দিতেই হবে এবং সমাজবিপ্লবের মার্কসবাদী-লেনিনবাদী তত্ত্বকে তাঁদের দৃঢ়ভাবে তুলে ধরতে হবে, যাতে জনসাধারণ বুঝতে পারে যে, সমাজবিপ্লব শুধু একান্ত প্রয়োজনীয়ই নয়, সম্পূর্ণ সম্ভবও বটে এবং এটি এমন একটি বৈজ্ঞানিক সত্য যা ইতিমধ্যেই মানবজাতির সমগ্র ইতিহাস এবং সোসাভিয়েত ইউনিয়নের জয়যাত্রার দ্বারা প্রমাণিত হয়ে গেছে।

কিন্তু বিপরীতগুলোর প্রত্যেক নির্দিষ্ট সংগ্রামের পরিস্থিতিকে আমাদের অবশ্যই মূর্তভাবে পর্যালোচনা করতে হবে এবং সবকিছুতেই ওপরে-আলোচিত সূত্র যথেচ্ছভাবে প্রয়োগ করা চলবে না। দ্বন্দ্ব ও সংগ্রাম হচ্ছে সর্বব্যাপী ও ধ্রুব। কিন্তু দ্বন্দ্বের মীমাংসার পদ্ধতি, অর্থাৎ সংগ্রামের রূপ, দ্বন্দ্বের প্রকৃতির বিভিন্নতার জন্য ভিন্নতর হয়। কোনো কোনো দ্বন্দ্বে রয়েছে প্রকাশ্য বৈরিতা অন্যগুলোতে তা নেই। বস্তুর নির্দিষ্ট বিকাশানুসারে কোনো কোনো দ্বন্দ্ব শুরুতে থাকে অবৈরী কিন্তু পরে তা বৈরী দ্বন্দ্বে বিকাশ লাভ করে। আবার কোনো কোনো দ্বন্দ্ব শুরুতে থাকে বৈরী কিন্তু পরে তা অবৈরী দ্বন্দ্বে বিকাশ লাভ করে।

পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, যতদিন শ্রেণির অস্তিত্ব আছে ততদিন কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে নির্ভুল ও ভুল চিন্তাধারার দ্বন্দ্ব পার্টির ভিতরে শ্রেণি-দ্বন্দ্বের প্রতিফলন। গোড়ার দিকে, বা কতকগুলো প্রশ্নে, এই ধরনের দ্বন্দ্ব সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের বৈরী রূপে প্রকাশ নাও করতে পারে। কিন্তু শ্রেণিসংগ্রামের বিকাশের সাথে সাথে সেগুলো বৃদ্ধি পেতে পারে এবং বৈরী হয়ে দাঁড়াতে পারে। সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস আমাদের দেখিয়ে দেয় যে, লেনিন ও স্তালিনের সঠিক চিন্তাধারা এবং ট্রটস্কি ও বুখারিন প্রমুখের ভুল চিন্তাধারার দ্বন্দ্ব গোড়ার দিকে বৈরী রূপে আত্মপ্রকাশ করেনি, কিন্তু পরে ঐ দ্বন্দ্ব বৈরী হয়ে দাঁড়ায়। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাসেও অনুরূপ ঘটনা আছে। আমাদের পার্টির অনেক কমরেডের সঠিক চিন্তাধারা এবং ছেন তু সিউ ও চাং কুও-থাও প্রমুখ ব্যক্তিদের ভুল চিন্তাধারার দ্বন্দ্ব গোড়ার দিকেও বৈরী রূপে আত্মপ্রকাশ করেনি, কিন্তু পরে তা বৈরী হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমানে আমাদের পার্টির মধ্যে সঠিক ও বেঠিক চিন্তাধারার দ্বন্দ্ব বৈরী রূপে আত্মপ্রকাশ করেনি এবং যে কমরেডরা ভুল করেছেন তাঁরা যদি ভুল সংশোধন করতে পারেন, তাহলে ঐ দ্বন্দ্ব বৈরিতায় রূপ নেবে না। এজন্য, পার্টিকে অবশ্যই একদিকে ভুল চিন্তাধারার বিরুদ্ধে কঠিন সংগ্রাম করতে হবে , এবং অন্যদিকে যে কমরেডরা ভুল করেছেন তাঁদেরকে জেগে ওঠার জন্য যথেষ্ট সুযোগ দিতে হবে। এমতাবস্থায়, অতিরিক্ত সংগ্রাম স্পষ্টতঃই যথাযথ নয়। কিন্তু যাঁরা ভুল করেছেন তাঁরা যদি ভুলগুলো আঁকড়ে ধরে থাকেন এবং বাড়িয়ে তোলেন, তাহলে ঐ দ্বন্দ্বের বৈরিতায় রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আরো পড়ুন:  মার্কসবাদের তিনটি উৎস ও তিনটি উপাদান

অর্থনীতির দিক দিয়ে, ধনতান্ত্রিক সমাজে, (যেখানে বুর্জোয়া-শাসনাধীনে শহর গ্রামাঞ্চলকে নির্মমভাবে শোষণ করে) এবং চীনে কুওমিনতাঙ-শাসিত এলাকায় (যেখানে বিদেশী সাম্রাজ্যবাদ ও দেশী বড় মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া শ্রেণির শাসনাধীন শহর চরম বর্বরতার সঙ্গে গ্রামাঞ্চলকে শোষণ করে)—শহর ও গ্রামাঞ্চলের মধ্যকার দ্বন্দ্ব একটা অতিশয় বৈরী দ্বন্দ্ব। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক দেশে এবং আমাদের বিপ্লবী ঘাঁটি এলাকায় এই বৈরী দ্বন্দ্ব অবৈরী দ্বন্দ্বে রূপান্তরিত হয়েছে এবং যখন সাম্যবাদী সমাজে পৌঁছানো যাবে তখন এই দ্বন্দ্ব বিলুপ্ত হবে।

লেনিন বলেছেন, “বৈরিতা ও দ্বন্দ্ব মোটেই এক ও অভিন্ন নয়। সমাজতন্ত্রের অধীনে, প্রথমটার বিলুপ্তি ঘটবে, কিন্তু দ্বিতীয়টা থাকবে।”[২৫] অর্থাৎ বৈরিতা হচ্ছে বিপরীতগুলোর সংগ্রামের একটা রূপ, কিন্তু একমাত্র রূপ নয়; বৈরিতার সূত্রকে সর্বত্র নির্বিচারে প্রয়োগ করা যায় না।

৭. উপসংহার

আমরা এখন সংক্ষেপে কয়েকটা কথা বলতে পারি। বস্তুর মধ্যে দ্বন্দ্বের নিয়ম, অর্থাৎ বিপরীতের একত্বের নিয়ম হলো প্রকৃতি ও সমাজের মৌলিক নিয়ম এবং এজন্য তা চিন্তারও মৌলিক নিয়ম। এটা অধিবিদ্যার বিশ্বদৃষ্টির বিরোধী। এটা মানবিক জ্ঞানের ইতিহাসে এক বিরাট বিপ্লবের পরিচায়ক। দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ অনুযায়ী প্রকৃত বস্তুর এবং মনোগত চিন্তার সকল প্রক্রিয়ায় দ্বন্দ্ব বিদ্যমান, এবং সকল প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রবহমান; এটা হচ্ছে দ্বন্দ্বের সর্বজনীনতা ও অনাপেক্ষিকতা। প্রত্যেক দ্বন্দ্বে এবং তার প্রত্যেকটি দিকের রয়েছে নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য; এটা হচ্ছে দ্বন্দ্বের বিশিষ্টতা ও আপেক্ষিকতা। নির্দিষ্ট অবস্থায় বিপরীতগুলোর থাকে অভেদ এবং কাজেই তারা একক সত্তায় সহাবস্থান করতে পারে এবং প্রত্যেকে নিজের বিপরীতে পরিণত হতে পারে; এটাই আবার দ্বন্দ্বের বিশিষ্টতা ও আপেক্ষিকতা। কিন্তু বিপরীতগুলোর সংগ্রাম বিরামহীন, যখন বিপরীতগুলো সহাবস্থান করছে বা যখন তারা নিজেদের পরস্পরে রূপান্তরিত করছে, উভয় সময়েই সংগ্রাম চলতে থাকে এবং যখন তারা নিজেদের পারস্পরিক রূপান্তর ঘটাচ্ছে তখন এটা বিশেষভাবে স্পষ্ট হয়ে ওঠে; এটাই হচ্ছে আবার দ্বন্দ্বের সর্বজনীনতা ও অনাপেক্ষিকতা। দ্বন্দ্বের বিশিষ্টতা ও আপেক্ষিকতা পর্যালোচনায় আমাদের অবশ্যই প্রধান ও অপ্রধান দ্বন্দ্বের মধ্যে এবং একটা দ্বন্দ্বের মুখ্য দিক ও গৌণ দিকের মধ্যে পার্থক্যের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে; দ্বন্দ্বের সর্বজনীনতা ও দ্বন্দ্বের মধ্যকার বিপরীতগুলোর সংগ্রাম পর্যালোচনা করার সময়ে আমাদের অবশ্যই সংগ্রামের বিভিন্ন রূপের মধ্যকার পার্থক্যের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে; অন্যথায় আমরা ভুল করব। যদি পর্যালোচনার মাধ্যমে, আমরা ওপরে বর্ণিত মূল বিষয়গুলোর প্রকৃত উপলব্ধি অর্জন করতে পারি, তাহলে আমরা মতান্ধতাবাদী চিন্তাধারা ধ্বংস করতে সক্ষম হবো যা মার্কসবাদ-লেনিনবাদের মূলনীতির পরিপন্থী এবং আমাদের বিপ্লবী আদর্শের পক্ষে ক্ষতিকর; এবং আমাদের অভিজ্ঞ কমরেডরা তাঁদের অভিজ্ঞতাকে নীতিতে বিন্যস্ত করতে পারবেন এবং অভিজ্ঞতাবাদী ভুলের পুনরাবৃত্তি পরিহার করতে সক্ষম হবেন। এগুলো হচ্ছে দ্বন্দ্বের নিয়ম সম্পর্কে আমাদের পর্যালোচনা থেকে লব্ধ কতিপয় সরল সিদ্ধান্ত।[২৬]

টিকা:

১. ভি.আই. লেনিন, “হেগেলের ‘দর্শনের ইতিহাস প্রসঙ্গে বক্তৃতাবলী’-র সংক্ষিপ্তসার” (১৯১৫) দ্রষ্টব্য, “লেনিনের রচনাবলী”-র ৩৮ খন্ড, গণপ্রকাশনালয়, ১৯৫৯ সালের সংস্করণ, পৃষ্ঠা ২৭৮।

২. “দ্বন্দ্ববাদের প্রশ্নাবলী প্রসঙ্গে” নামক প্রবন্ধে লেনিন বলেছেন: “একটা একক সমগ্রের দ্বিধা বিভক্তি এবং তার দ্বন্দ্বমান দিকগুলো সম্পর্কে জ্ঞান হচ্ছে দ্বন্দ্ববাদের সারবস্তু (দ্বন্দ্ববাদের অন্যতম ‘প্রকৃতি’, তার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য, এমনকি তার সবচেয়ে প্রধান বৈশিষ্ট্য)।” ‘দ্বন্দ্ববাদের প্রধান উপাদান’ নামক প্রবন্ধে লেনিন লিখেছেন: সংক্ষেপে, “দ্বন্দ্ববাদকে বিপরীতসমূহের একত্বের মতবাদ বলে বর্ণনা করা যেতে পারে। এইভাবেই দ্বন্দ্ববাদের শাসকে আঁকড়ে ধরা যায়, কিন্তু এটাকে ব্যাখ্যা করা এবং পরিস্ফুর্ত করা প্রয়োজন।” “লেনিনের নির্বাচিত রচনাবলীর” দ্বিতীয় খন্ড, গণপ্রকাশনালয়, ১৯৭২ সালের সংস্করণ, পৃষ্ঠা ৭১১, ৬০৮ দ্রষ্টব্য।।

৩. ভি.আই. লেনিন, “দ্বন্দ্ববাদের প্রশ্নাবলী প্রসঙ্গে” দ্রষ্টব্য। “লেনিনের নির্বাচিত রচনাবলীর” দ্বিতীয় খন্ড, গণপ্রকাশনালয়, ১৯৭২ সালের সংস্করণ, পৃষ্ঠা ৭১২।

আরো পড়ুন:  এনিসিডেমাস খ্রিস্ট পূর্ব প্রথম শতকের গ্রিক দার্শনিক

৪. “হানশু, তোং চোংশুর জীবনী” দ্রষ্টব্য। তোং চোংশু (খ্রিস্টপূর্ব ১৭১-খ্রিস্টপূর্ব ১০৪) পশ্চিম হান রাজবংশের আমলে কনফুসীয় মতবাদের প্রধান প্রতিনিধি। তিনি একদা হান বংশের সম্রাট উতিকে বলেছিলেন: “তাও স্বর্গ থেকে উৎপন্ন হয়, স্বর্গ যেমন বদলায় না, তাও-ও তেমনি বদলায় না।” “তাও ছিল প্রাচীন চীনের দার্শনিকদের দ্বারা ব্যবহৃত একটি শব্দ। এর অর্থ হল “পথ” বা “যুক্তি”, তবে এখানে “বিধি” বা “নিয়ম” অর্থেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

৫. এফ. এঙ্গেলস, “দ্যুরিঙের বিরুদ্ধে”, প্রথম অধ্যায়ের দ্বাদশ পরিচ্ছেদ দ্বন্দ্ববাদ ও পরিমাণ ও গুণ” (মার্কস ও এঙ্গেলসের নির্বাচিত রচনাবলীর” তৃতীয় খন্ড, গণপ্রকাশনালয়, ১৯৭২ সালের সংস্করণ, পৃষ্ঠা ১৬০) দ্রষ্টব্য।

৬. ভি. আই. লেনিন, “দ্বন্দ্ববাদের প্রশ্নাবলী প্রসঙ্গে” (“লেনিনের নির্বাচিত রচনাবলীর” দ্বিতীয় খন্ড, গণপ্রকশনালয়, ১৯৭২ সালের সংস্করণ, পৃষ্ঠা ৭১১) দ্রষ্টব্য।

৭. এফ. এঙ্গেলস, “দ্যুরিঙের বিরুদ্ধে”, প্রথম অধ্যায়ের দ্বাদশ পরিচ্ছেদ “দ্বন্দ্ববাদ ও পরিমাণ ও গুণ” (“মার্কস ও এঙ্গেলসের নির্বাচিত রচনাবলী”র তৃতীয় খন্ড, গণপ্রকাশনালয়, ১৯৭২ সালের সংস্করণ, পৃষ্ঠা ১৬০-১৬১) দ্রষ্টব্য।

৮. ভি. আই. লেনিন, “দ্বন্দ্ববাদের প্রশ্নাবলী প্রসঙ্গে” (“লেনিনের নির্বাচিত রচনাবলীর” দ্বিতীয় খন্ড, গণপ্রকাশনালয়, ১৯৭২ সালের সংস্করণ, পৃষ্ঠা ৭১১) দ্রষ্টব্য।

৯. ভি. আই. লেনিন, “দ্বন্দ্ববাদের প্রশ্নাবলী প্রসঙ্গে” (“লেনিনের নির্বাচিত রচনাবলীর” দ্বিতীয় খন্ড, গণপ্রকাশনালয়, ১৯৭২ সালের সংস্করণ, পৃষ্ঠা ৭১২-৭১৩) দ্রষ্টব্য।

১০. লেনিনের রচনাবলীর ২৫তম খন্ডের অন্তর্ভুক্ত “কমিউনিস্ট” নামক প্রবন্ধটি দ্রষ্টব্য। বর্তমান মাও সেতুংয়ের নির্বাচিত রচনাবলীর অন্তর্ভুক্ত ‘চীনের বিপ্লবী যুদ্ধের রণনীতির সমস্যা’ প্রবন্ধটির ১০ নম্বর টীকা দেখুন।।

১১. “সুন জি” নামক গ্রন্থের “আক্রমণের রণনীতি” দ্রষ্টব্য।

১২. ওয়েই চেং (৫৮০-৬৪৩ খ্রিস্টাব্দ) চীনের থাং রাজবংশের প্রথম দিককার একজন রাজনীতিবিদ ও ঐতিহাসিক ছিলেন। এই উদ্ধৃতি “জি চি খোং চিয়ান” নামক গ্রন্থের ১৯২তম খন্ডে দেখুন।

১৩. “শুই হু চুয়ান” (“জলাবিলের বীরনায়কগণ”) ১৪শ শতাব্দীর একটি বিখ্যাত চীনা উপন্যাস। এতে উত্তর সোং বংশের শেষের দিকের একটি কৃষক-যুদ্ধ বর্ণনা করা হয়েছে। উপন্যাসটিতে সোং চিয়াং ছিলেন কৃষক-যুদ্ধের প্রধান নেতা। চু গ্রাম (চু চিয়াচুয়াং গ্রাম) ছিল কৃষকযুদ্ধের ঘাঁটি লিয়াংশানপোর কাছাকাছি। এই গ্রামের শাসক চু ছাওফেং ছিল একজন বড় স্বৈরাচারী জমিদার।

১৪. ভি. আই. লেনিন, “পুনরায় ট্রেড ইউনিয়ন, বর্তমান পরিস্থিতি এবং ট্রটস্কি ও বুখারিনের ভুল সম্পর্কে”, লেনিনের নির্বাচিত রচনাবলীর চতুর্থ খন্ড, গণপ্রকাশনালয়ের ১৯৭২ সালের সংস্করণ, ৪৫৩ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।

১৫. ভি. আই. লেনিন, “কী করতে হবে?” প্রবন্ধটির প্রথম অধ্যায়ের চতুর্থ পরিচ্ছেদ দেখুন। লেনিনের নির্বাচিত রচনাবলীর প্রথম খন্ড, গণপ্রকাশনালয়ের ১৯৭২ সালের সংস্করণ, ২৪১ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।

১৬. ভি. আই. লেনিন, “হেগেলের ‘যুক্তিশাস্ত্রের বিজ্ঞান’-এর সংক্ষিপ্তসার” দ্রষ্টব্য। লেনিনের রচনাবলী, ৩৮ খন্ড, গণপ্রকাশনালয়, ১৯৭২ সালের সংস্করণ, ২৪১ পৃষ্ঠা দেখুন।

১৭. “শান হাই চিং” চীনের প্রাচীনকালের একটি ভূগোল শাস্ত্রগ্রন্থ। এর অন্তর্ভুক্ত ছিল প্রাচীন যুগের বিভিন্ন উপকথা ও লোককাহিনী। এর একটি কাহিনীর একজন চরিত্র খুয়া ফু ছিল একজন অতিমানব। এতে বলা হয়: খুয়া ফু সূর্যের পশ্চাদ্ধাবন করে এবং করতে করতে সূর্যকে প্রায় ধরে ফেলে। কিন্তু তখন তার ভীষণ তেষ্টা পায়, তাই সে হুয়াংহো ও ওয়েইশুই নদী দুটির পানি পান করতে লাগল। নদী দুটির পানি তার পিপাসা মেটাবার পক্ষে যথেষ্ট ছিল না, তখন সে বিশাল সাগর খুঁজে পাওয়ার জন্য উত্তর দিকে চলে যায়, কিন্তু সে ব্যর্থ হয়, পথে সে তৃষ্ণায় মৃত্যুবরণ করে। এর সঙ্গে তার পরিত্যক্ত লাঠি অরণ্যে রূপান্তরিত হয়।”

১৮. ঈ হচ্ছে প্রাচীন উপকথার একজন বীরনায়ক, প্রসিদ্ধ তীরন্দাজ। “নয়টি সূর্যকে তীর মেরে নামানো” তার ধনুকবিদ্যা সম্পর্কে একটি বিখ্যাত গল্প। পশ্চিম হান রাজবংশ আমলের লিউ আন (খ্রিঃ পূঃ দ্বিতীয় শতাব্দীর একজন অভিজাত ব্যক্তি, যিনি হুয়াই নান রাজা নামেও পরিচিত) এবং তার পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সংকলিত “হুয়াই নান জি” নামক গ্রন্থের একটা উপকথায় বলা হয়: “সম্রাট ইয়াও-এর আমলে আকাশে দশটি সূর্য উদিত হয়। সূর্যের প্রখর তাপে শস্য ও গাছপালার বেশ ক্ষতি হয়, আর জনসাধারণ অনাহারে পতিত হয়। তাছাড়া নানা রকমের ভয়ানক পশুও জনসাধারণের ক্ষতি সাধন করে। তাই তীর মেরে সূর্যগুলোকে নামানোর জন্য এবং সেই ভয়ানক পশুগুলোকে ধ্বংস করার জন্য সম্রাট ইয়াও তীরন্দাজ ঈকে আদেশ দেন।……জনসাধারণ সবাই আনন্দে মেতে ওঠে।” পূর্ব হান বংশের লোক ওয়াং ই (খ্রিঃ দ্বিতীয় শতাব্দীর একজন লেখক) কবি দ্য ইউয়ান-এর রচিত “আকাশকে জিজ্ঞাসা কর” নামক কাব্যের টীকায় বলেছেন: “হুয়াই নান জি’ নামক গ্রন্থে বলা হয়: সম্রাট ইয়াও-এর আমলে আকাশে দশটি সূর্য উদিত হয়। গাছপালা ও জঙ্গল সবকিছু জ্বলে-পুড়ে খাক হয়ে যায়। সম্রাট ইয়াও ঈকে আদেশ দেন তীর মেরে সূর্যগুলোকে নামিয়ে দিতে। ঈ দশটি সূর্যের নয়টিকেই তীর মেরে ভূপাতিত করে….কেবল একটিকে ছেড়ে দেয়।”

আরো পড়ুন:  কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার --- বুর্জোয়া ও প্রলেতারিয়েত

১৯. “সী ইয়ৌ চী” (“পশ্চিমে তীর্থযাত্রা”) হলো চীনের মিং রাজবংশের আমলের লেখক উ ছেংএন-এর রচিত একটি পৌরাণিক উপন্যাস। বানররাজ সুন উখোং এই উপন্যাসের প্রধান নায়ক। সে ইচ্ছা করলে মন্ত্রবলে পাখি, পশু, পোকা, মাছ, তৃণ, গাছ, বস্তু বা মানুষ ইত্যাদি বাহাত্তরটি রূপ ধারণ করতে পারে।

২০. “লিয়াও চাই চি ই” (“দিলখুশ তসবীরখানার অদ্ভুত অদ্ভুত গল্প”) চীনের ছিং রাজবংশ আমলের সাহিত্যিক ফু সোংলিং-র রচিত কাহিনী ও ছােটগল্পের একটি সংকলন। এর অন্তর্ভুক্ত অধিকাংশ কাহিনী অপদেবতা এবং শেয়াল আত্মাদের সম্পর্কে।

২১. কার্ল মার্কস, “রাজনৈতিক অর্থনীতির সমালোচনার ভূমিকা” দ্রষ্টব্য। “মার্কস ও এঙ্গেলসের নির্বাচিত রচনাবলীর” দ্বিতীয় খন্ড, গণপ্রকাশনালয়, ১৯৭২ সালের সংস্করণ, ১১৩ পৃষ্ঠা দেখুন।

২২. ভি. আই. লেনিন, “দ্বন্দ্ববাদের প্রশ্নাবলী প্রসঙ্গে” লেনিনের নির্বাচিত রচনাবলীর দ্বিতীয় খন্ড, গণপ্রকাশনালয়, ১৯৭২ সালের সংস্করণ, ৭১২ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।

২৩. চীনের পূর্ব হান রাজবংশ আমলের ঐতিহাসিক পান কু (৩২-৯২ খ্রিস্টাব্দ) রচিত “হান শু” (অর্থাৎ “আগেকার হান বংশের ইতিহাস”) নামক গ্রন্থের ৩০তম খন্ড দ্রষ্টব্য।

২৪. ভি. আই. লেনিন. “দ্বন্দ্ববাদের প্রশ্নাবলী প্রসঙ্গে”, লেনিনের নির্বাচিত রচনাবলীর দ্বিতীয় খন্ড, গণপ্রকাশনালয়, ১৯৭২ সালের সংস্করণ, ৭১২ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।

২৫. ভি. আই. লেনিন, “এন. আই. বুখারিনের গ্রন্থ পরিবর্তনশীল যুগের অর্থনীতির সম্পর্কে মন্তব্য”, গণপ্রকাশনালয়, ১৯৭৬ সালের সংস্করণ, পৃষ্ঠা ১২ দ্রষ্টব্য।

২৬. মাও সেতুংয়ের প্রবন্ধটি আবুল কাসেম ফজলুল হক অনূদিত ও সম্পাদিত মাও সেতুঙ নির্বাচিত রচনাবলী প্রথম খণ্ড, চলন্তিকা বইঘর, ঢাকা, অক্টোবর ১৯৯২, ৩০৫-৩৩৬ পৃষ্ঠা থেকে নেয়া হয়েছে এবং রোদ্দুরে ডট কমে প্রকাশ করা হলো। প্রকাশ করার সময় কিছু বানান পরিবর্তন করা হয়েছে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!