ইতিহাসের দর্শন (ইংরেজি: Philosophy of History) হচ্ছে মানুষের আর্থনীতিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিকাশের ইতিহাসের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য এবং বিধানের আলোচনা। শব্দটি ভলতেয়ার তৈরি করেছিলেন। ইতিহাসের দর্শন নিয়ে প্রাচীন জ্ঞানীগণ আলোচনা করলেও একটি নির্দিষ্ট বিষয় হিসাবে ইতিহাসের দর্শনের বিস্তারিত আলোচনা আমরা অষ্টাদশ শতকের ইউরোপীয় চিন্তাবিদ ভলতেয়ার, হারডার, কনডরসেট, মন্টেস্কু প্রমুখের মধ্যে বিশেষভাবে দেখতে পাই।
পুঁজিবাদ-পূর্ব যুগে ইতিহাসের দর্শন
তাঁর পোয়েটিক্স গ্রন্থে, অ্যারিস্টটল (খ্রিস্টপূর্ব ৩৮৪-৩২২) ইতিহাসের চেয়ে কবিতার শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখেছিলেন, কারণ কবিতা যা সত্য সেটিকে সত্য বলার চেয়ে বরং যা অবশ্যই বা হওয়া উচিত সত্য তাই বলে।
অষ্টাদশ শতকের বহু পূর্বে চতুর্থ শতকের খ্রিষ্টীয় ধর্মযাজক সেইন্ট অগাস্টিনের দেওয়া ইতিহাসের ধর্মীয় অদৃষ্টবাদী ব্যাখ্যাই প্রচলিত ছিল। প্রচলিত এই ব্যাখ্যাকে খণ্ডন করে ভলটেয়ার, মন্টেস্কু প্রমুখ চিন্তাবিদগণ ইতিহাসের ব্যাখ্যায় সামগ্রিকতা, অগ্রগতি, কার্যকারণ সম্পর্ক এবং ইতিহাসের গতিতে মানুষের ভৌগোলিক এবং সামাজিক পরিবেশের প্রভাবের সত্য প্রতিষ্ঠত করেন।
অন্যদিকে দার্শনিক হেগেল ইতিহাসকে ভাবের স্ববিধানভিত্তিক বিকাশমান সত্তা বলে ব্যাখ্যা করেন। ইতিহাসের এই ভাববাদী ব্যাখ্যার প্রতি-ব্যাখ্যা হিসাবে কার্ল মার্কস এবং ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস ইতিহাসের দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদী ব্যাখ্যা উপস্থিত করেন। ইতিহাসের ব্যাখ্যায় দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের প্রয়োগকে ঐতিহাসিক বস্তুবাদ বলা হয়।
ইতিহাসের দর্শনে আধুনিককালের ভাববাদী ব্যাখ্যাতাদের মধ্যে টয়েনবি এবং স্পেংলারের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এঁদের ব্যাখ্যায় ইতিহাসের বিবর্তনে অগ্রগতি এবং কার্যকারণের বিধানকে অস্বীকারের প্রবণতা দেখা।
তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ৩১০।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।