পিতৃতন্ত্র বা পুরুষতন্ত্র হচ্ছে মানুষের সামাজিক বিকাশের একটি ঐতিহাসিক পর্যায়

মানুষের সামাজিক বিকাশের একটি ঐতিহাসিক পর্যায় হচ্ছে পিতৃতন্ত্র বা পুরুষতন্ত্র (ইংরেজি: Patriarchy)। মানুষের আদিম সামাজিক সংগঠন ছিল সাম্যবাদী ও মাতৃতান্ত্রিক। পশু শিকারের পরবর্তী পর্যায়ে পশুপালন ও কৃষিকাজ যখন জীবিকার প্রধান উপায় হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে তখন মানুষের সামাজিক সংগঠনেও একটা পরিবর্তন সূচিত হয়। ইতিপূর্বে জীবিকার অধিকতর দুর্বল অবস্থার জন্য এবং পারিবারিক জীবনের অস্থিরতা এবং অসংবদ্ধতার কারণে সন্তানের জননী ছিল বংশের পরিচয় সূচক। এই পর্যায়কে বলা হয় মাতৃতন্ত্র।

অর্থনীতির পরিবর্তিত পর্যায়ে মাতৃতন্ত্রের স্থানে পিতার অধিকার জীবিকার্জনে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করতে থাকে। এই পর্যায়ে শ্রমের বিভাগ শুরু হয়। পশুপালন ও কৃষিকাজের সঙ্গে সঙ্গে পুরুষ গৃহপালিত পশু এবং ক্ষেত্রের কৃষিকাজের দায়িত্ব গ্রহণ করতে শুরু করে। দ্রব্য বিনিময়ের ব্যবস্থাও ইতোমধ্যে বেশ বিকাশ লাভ করেছে। পশুর বিনিময়ে অন্য মানুষকে দাস হিসাবে লাভ করাও শুরু হয়েছে। পিতৃতন্ত্রের এই পর্যায়ে নারী পুরুষের বিবাহের সম্বন্ধের ধারাও পরিবর্তিত হয়।

মাতৃতান্ত্রিক যুগে যৌথ বিবাহ কিংবা এক নারীর বহু স্বামী প্রথাই প্রধান ছিল। বর্তমান পর্যায়ে যৌথ বিবাহের স্থলে যুগ্ম বিবাহ চালু হতে শুরু করে। এখন থেকে পরিবারের এবং সন্তানের মালিক হয়ে দাঁড়ায় পিতা। বংশের সূচকও হয় পিতা। পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের লোকসংখ্যা কম হতো না। যুগ্ম বিবাহ মানে এক পত্নীক বিবাহ নয়। পুরুষ একাধিক পত্নী বিবাহ করতে পারত। এবং যে কাউকে বর্জনও করতে পারত। এই পর্যায়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য এই যে, পুরুষই পরিবারের নিয়ন্ত্রক। পুরুষের সন্তানসন্ততি নিয়ে গোত্র তৈরি হতো; উৎপাদনের উপায়, বিনিময় এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকতর বিকাশে পিতৃতান্ত্রিক পরিবার ক্রমে এক পত্নীক পরিবারের রূপ গ্রহণ করে।

তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ৩০৫।

Leave a Comment

error: Content is protected !!