টিপু বিশ্বাস, রাজনীতিবিদ
আবদুল মতিন, আলাউদ্দিন আহমেদ ও টিপু বিশ্বাস মওলানা ভাসানী’র নেতৃত্বাধীন কৃষক সমিতি করতেন। আবদুল মতিন ও আলাউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে ঈশ্বরদীর শাহাপুরে ১৯৬৯ সালের ৫ অক্টোবর সারাদেশ থেকে লক্ষাধিক কৃষক ও ক্ষেতমজুররা লালটুপি পরিহিত ও লাঠি হাতে সমবেত হয়। কার্যতঃ সেদিন ইয়াহিয়ার মার্শাল ল ভেঙে যায়। আমি, টিপু বিশ্বাসের নেতৃত্বে পাবনা শহর ও আশেপাশের গ্রাম থেকে বিপুল শ্রমিক, কৃষক, ক্ষেতমজুর ও ছাত্রজনতা নিয়ে লালটুপি পরে লাঠি হাতে ঐ সমাবেশে যোগ দিই। লালটুপি ছিল লালফৌজের ভ্রূণ।
আমি ছিলাম এডওয়ার্ড কলেজ ছাত্র সংসদের ‘৬৬-‘৬৭ সালের নির্বাচিত জিএস। আমি ছিলাম ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন গ্রুপের) কেন্দ্রীয় নেতা। তিনি জিএস থাকাকালীন পাবনায় ভূট্টা বিষক্রিয়ায় প্রায় ২০০ শতাধিক জনতা অসুস্থ্য হয়ে পড়লে ছাত্র-জনতা বিক্ষুব্ধ ও মারমুখী হয় সে আন্দোলনে। আমার নেতৃত্বে তৎকালীন স্বৈরশাসক আইয়ূবের ফুড সেক্রেটারি ক্যাপ্টেন জায়েদী’র পাবনার বাড়ী ঘেরাও হয় এবং জনতা বাড়ীতে আগুন লাগিয়ে দেয়। কার্যতঃ সেদিন পাবনা ৬ ঘণ্টা জনগনের দখলে ছিল। বন্দুকের দোকান লুট হয়, জেলা প্রশাসক গুলিবিদ্ধ হন। বলতে গেলে, ঐ আন্দোলনে পাবনার সকল বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সমাজসেবক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী এবং শ্রমিক কৃষক ছাত্রনেতা ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের বিরুদ্ধে মোকদ্দমা হয় এবং তাদের গ্রেফতার করে পাবনা কারাগারে রাখা হয়, আমি ঐ সময়ে গ্রেফতার হয়ে ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত পাবনার কারাগারে বন্দী ছিলাম, ২৪ ফেব্রুয়ারী মুক্ত হই। তখন ১১ দফার যে ছাত্র গণআন্দোলন চলছিল সে আন্দোলনে আমি যোগ দিই এবং ২৫ মার্চ, ১৯৬৯ ইয়াহিয়ার মার্শাল ল জারী না হওয়া পর্যন্ত আমি সেই আন্দোলনে ছিলাম।
আবদুল মতিন, আলাউদ্দিন আহমেদ ও টিপু বিশ্বাস ভাসানী ন্যাপ করতেন না। তাদের পার্টির নাম ছিলো পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি। এই পার্টির জন্ম ১৯৬৮ সালের অক্টোবরে। পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির কর্মসূচী ছিলো সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে মুক্ত হওয়া এবং ভারতের নিয়ন্ত্রনের বাইরে স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ববাংলা গঠনের, আভ্যন্তরীন ক্ষেত্রে স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলার শত্রু ছিল পাকিস্তানের আমলা-দালাল-পুঁজিপতি শ্রেণী, জোতদার-মহাজনশ্রেণী এবং আন্তর্জাতিকভাবে শত্রু ছিলো মার্কিনসহ সকল সাম্রাজ্যবাদ, রুশ সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ এবং ভারতের টাটা বিড়লাসহ আমলা, ধনী এবং ভূস্বামীদের স্বার্থরক্ষাকারী ভারতীয় আধিপত্যবাদীদের রাষ্ট্র। এই শত্রুগুলোর মধ্যে পূর্ব বাংলার সকল জনগণের প্রধান দ্বন্দ্ব ছিল পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী এবং পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সাথে।
এই পরিস্থিতিতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানী সেনাবাহিনী জনগনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
২৬ মার্চ পাবনার পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির ডঃ অমলেন্দু দাক্ষী এবং রাধানগরে অবস্থিত মুক্তামহলের মালিক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাঈদ তালুকদারকে গ্রেফতার করে পাবনা বিসিক শিল্পনগরীতে বন্দী করে রাখে। বিসিক শিল্পনগরী ছিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর প্রধান ঘাঁটি।
পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির লালফৌজ ২৬ ও ২৭ মার্চ সংগঠিত হয়। ২৮ মার্চ ভোরে আমার নেতৃত্বে বিশালবাহিনী বিসিক শিল্পনগরীতে অতর্কিত ও উপুর্যপুরী বোমা হামলা করে। ৫/৬ ঘন্টার তীব্র লড়াইতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ২৯ জন নিহত হয়। আমাদের ৫/৬ জন মারাত্মক জখম হয়- চিকিৎসা এবং অনেক কষ্টভোগের পর তারা সুস্থ্য হয়ে ওঠে।
অতর্কিত এই হামলায় দিশেহারা পাকিস্তানী সেনাবাহিনী পিছু হটতে থাকে। তবে, পাকিস্তানী সেনাবাহিনী গ্রামের দিকে ঢুকলে জনতার আক্রমনের মুখে পড়ে; বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন জায়গায় জনতার হামলায় নিহত হয়। জনগণ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ডেডবডি কেটে কেটে ফালা, সড়কি ছুরির সাথে গেঁথে গেঁথে মিছিল ও উৎসব করে। একজনও জীবিত অবস্থায় চলে যেতে পারেনি।
পিছু হটার সময় পাকিস্তানী বাহিনী ডঃ দাক্ষী ও সাঈদ তালুকদারকে বেয়োনেট চার্জে হত্যা করে ও তাদের দেহ এসিড ঢেলে পুড়িয়ে দেয়।
পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর আরেকটি অবস্থান ছিলো টেলিফোন এক্সচেন্জে। সেখানেও তারা প্রতিরোধের মুখে পড়ে ও নির্মূল হয়।
১২ এপ্রিল, ১৯৭১ পুনরায় সেনাসমাবেশ না করা পর্যন্ত পাবনা মুক্ত ছিল।
শুধু পাবনায় নয়, স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ববাংলা গঠনের রাজনীতির ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির একাংশ কমরেড নূর মোহাম্মদ ও বিমল বিশ্বাসের নেতৃত্বে যশোরে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
নোয়াখালীর রামগতিতে কমরেড তোয়াহার নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে।
বরিশালের পেয়ারাবাগানে কমরেড সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে সর্বহারা পার্টি পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে। পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি, পূর্বপাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি এবং সর্বহারা পার্টি-এই তিন দলেরই সিদ্ধান্ত ও রাজনীতি ছিল দেশের অভ্যন্তরে থেকেই লড়াই করা। তিন দলই যেহেতু ভারতীয় আধিপত্যবাদকে শত্রু চিহ্নিত করেছিলো, সেহেতু ভারতে তাঁদের যাবার কোন প্রশ্নই ছিলো না। তিন দলেরই লক্ষ্য ছিলো স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা গঠনের।
অতএব, পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সাথে সমঝোতা করে টিপু বিশ্বাস শানির দিয়াড়ে অবস্থান নেয়– এটা সর্বৈব মিথ্যা, বানোয়াট, কল্পিত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সাথে টিপু বিশ্বাসের সমঝোতার কোনো প্রমাণ কোনো লোকই দেখাতে পারবেন না। এই ধরনের মিথ্যাচারের প্রতি আমি তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দাজ্ঞাপন করি।
২৭ নভেম্বর ১৯৭১ শানির দিয়াড়ের যুদ্ধে ৫০০ এরও অধিক লালফৌজ মুক্তিসেনা আমার (টিপু বিশ্বাস) নেতৃত্বে মুজিব বাহিনীর হামলার সমুচিত জবাব দেয়। ৪/৫ ঘন্টার তীব্র এই লড়াইয়ে বিপুল পরিমাণ মুজিববাহিনী নিহত হয়, পিছু হটে এবং পালিয়ে যায়। এই লড়াইয়ে আমাদের রুহুল আমিন লুলু বিশ্বাস ও আবুল হোসেনসহ ১০ জন শহীদ হন।
এই লড়াইয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আমাদের সহযোগীতা করে, এটা শতভাগ মিথ্যাচার।
এই বিষয়টি ঐতিহাসিকভাবে সত্য যে, মুজিব বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর মধ্যে পার্থক্য ছিলো। তাদের কমান্ড পৃথক, ট্রেনিং পৃথক এবং ব্যবস্থাপনাও পৃথক ছিলো। মুজিব বাহিনী প্রধানতঃ গঠিত হয়েছিলো দেশের অভ্যন্তরে যেসব কমিউনিস্টরা পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে তাঁদের হত্যা করবার জন্য। এটা শুধু পাবনাতেই নয়, যশোর, নোয়াখালি ও বরিশালসহ সব জেলাতেই – একই উদ্দেশ্যে মুজিব বাহিনী কাজ করে। মুজিব বাহিনী আওয়ামী লীগের নিজস্ব বাহিনী। এই বাহিনী ভারতের দেরাদুনে জেনারেল ওভানের নেতৃত্বে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়। তিনি ছিলেন এই বাহিনীর রাজনৈতিক ও সামরিক প্রশিক্ষক। এই বাহিনীর জন্ম ও গঠন হয়েছিলো এই কারণে যে- আজ হোক কাল হোক দেশ স্বাধীন হবেই– যাতে করে দেশের ক্ষমতা দখলের জন্য কমিউনিস্ট পার্টি, কমিউনিস্ট বাহিনী ও কমিউনিস্ট এলাকা অবশিষ্ট না থাকে এবং সে কাজে তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। পাবনাতে আমাদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছে তারা মুজিব বাহিনী– মুক্তিবাহিনী নয়।
কমিউনিস্টরা দেশের অভ্যন্তরে শক্তিশালী হচ্ছিলো। স্বাধীনতা যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে কমিউনিস্টরা আরও শক্তিশালী হতো। এইরকম পরিস্থিতিতে ভারতীয় বাহিনী ২রা ডিসেম্বর সর্বাত্মক হামলা করে এবং মাত্র ১৪ দিনের লড়াইয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী পরাজিত হয়। প্রবাসী আওয়ামী লীগ সরকার গদিতে বসে। আত্মসমর্পনের অনুষ্ঠানে মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক আতাউল গণি ওসমানি উপস্থিত ছিলেন না। প্রকৃত অর্থে, এ লড়াই মূলতঃ ভারতীয় বাহিনী এবং পাকিস্তানী বাহিনীর মধ্যকার যুদ্ধ ছিলো। আমরা পাকিস্তান থেকে মুক্ত হলাম ঠিকই কিন্তু, ভারতের কর্তৃত্বে চলে গেলাম। বর্তমান বাংলাদেশ এখন প্রায় ভারতের উপনিবেশ। প্রকৃত মুক্তি পেতে গেলে আমাদেরকে অবশ্যই মার্কিন-ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।
পাকবাহিনীর সাথে আমাদের কোনো সমঝোতা ছিল না- তার আরও প্রমাণ হলো পাবনা শহরের শালগাড়িয়ার কমরেড আলতু’র বাড়ীতে আমাদের নেতৃস্থানীয় কমরেড আলতু ও হেনা এবং কর্মীদের মধ্যে লুটু ও রানুকে ‘৭১ সালের ২০ জুলাই রাজাকাররা হত্যা করে।
১৯৭১ সালের ২২ অগাস্ট ঈশ্বরদীতে আমাদের পার্টি কমরেড ফজলু মোল্লাকে রাজাকার খুদু খাঁ হত্যা করে।
কমরেড আবদুল মতিনের খোঁজে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী শাহজাদপুরের গুদিবাড়ীতে যায়। সেখানে তাঁকে না পেয়ে তাঁর বাবা আব্দুল জলিল ও মামাকে গ্রেফতার করে লন্চে নগরবাড়ী ঘাটে আনতে থাকে। লন্চের ওপরই দুজনকে নির্যাতন শুরু করে-দুজনই অজ্ঞান হয়ে যায়। মামার জ্ঞান ফিরলে দেখেন জলিলসাহেব আর নেই। অর্থাৎ, তাঁকে হত্যা করে যমুনাতে ফেলে দেয়া হয়েছে।
পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও রাজাকাররা ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে পাবনা থানার দাপুনিয়া ইউনিয়নের টিকরিতে আমাদের রাজনৈতিক এলাকায় হামলা করে। আমাদের লালফৌজ পিছু হটতে থাকে তখন মুজিববাহিনীরা পেছন থেকে গুলি করে। এভাবে, সম্মুখ থেকে ও পেছন থেকে আক্রান্ত হয়ে আমাদের স্থানীয় কমরেড জামসেদ বিশ্বাস ও আশরাফ আলীসহ ১৭ জন নিহত হয়।
সেপ্টেম্বর মাসে বেড়া থানার নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নে কমরেড ফরমান আলী’র বাড়ীতে আমাদের লালফৌজ অবস্থান করছিলো। ভোরে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও রাজাকার হামলা করলে আমাদের লালফৌজ পাল্টা গুলি করে এবং লড়াই প্রায় তিনঘন্টা স্থায়ী হয়- আমাদের বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। কিন্তু, এই লড়াইয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন কমরেড ফরমানের সহোদর আমাদের দরদী কমরেড আজিমউদ্দীন ও হজরত আলী এবং গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেফতার হন কমরেড আবদুল মতিনের ভাই কমরেড মুনু। মুনুকে পাকিস্তানী সেনারা নগরবাড়ী ক্যাম্পে অত্যাচার করে হত্যা করে।
১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ৯ তারিখে সাঁথিয়া থানার ছন্দা ব্রীজের ওপর বাস থেকে রাজাকাররা নামিয়ে নেয় আমাদের দরদী বন্ধু এডওয়ার্ড কলেজের ডেমোন্স্ট্রেটর আবুল কাশেমকে- তাকে নির্মমভাবে অত্যাচার ও হত্যা করে রাজাকাররা।
যেসব মিথ্যাচারী লোক তাদের লেখায় উল্লেখ করেছেন আমাদের লালফৌজ ও পাকিস্তান সেনাবাহিনী যৌথ হামলা চালিয়ে নাজিরপুরে ৬২ জনকে হত্যা করে, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
যেসব মিথ্যাচারী লোক তাদের লেখায় উল্লেখ করেছেন, প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধে ২৮ মার্চ পুলিশ লাইনের অস্ত্রাগার খুলে দিলে নক্সালবাহিনী বিপুল পরিমাণ অস্ত্র লুট করে—– পুলিশলাইনের অস্ত্রাগার খুলে দেবার এই বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। অস্ত্রাগারও খুলে দেয়া হয়নি এবং আমাদের অস্ত্র নেবার বিষয়টিও সম্পূর্ণ মিথ্যা। অন্যদিকে, কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আমাদের একটি অস্ত্রও দেয়া হয়নি- মুজিব বাহিনীরা ভারতে পালিয়ে যাবার সময় অনেকেই অস্ত্র ফেলে যায়। আমরা সেই ফেলে যাওয়া অস্ত্র সংগ্রহ করি এবং পাকবাহিনীকে হত্যা করেও আরো অস্ত্র সংগ্রহ করি। ‘আমাদের কেন অস্ত্র দেয়া হচ্ছে না-আমরা অস্ত্র চাই’- ৫ এপ্রিল, ১৯৭১ এ মর্মে আমরা প্রায় ৫০০০ লালফৌজ গ্রামে আমাদের হেডকোয়ার্টার থেকে সশস্ত্রভাবে মিছিল করে পুরনো টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে ডিসি নুরুল কাদের পরিচালিত হেডকোয়ার্টারে যাই এবং তার কাছে অস্ত্র ডিমান্ড করি। তিনি আমাদের জানান যে, অস্ত্রাগারে কোনো অস্ত্র নাই এবং আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন যে, আমাদের কত অস্ত্র লাগবে। আমি বলি- ‘আমাদের ৫০০টি থ্রি নট থ্রি দিলেই চলবে’। তিনি জানান যে, ‘ভারত থেকে অস্ত্র আসছে, আপনাদের অস্ত্র দেব’….. আমরা বুঝি যে এটা একটা ধোঁকাবাজি। আমরা মিছিল করে গ্রামে অবস্থিত আমাদের হেডকোয়ার্টারে ফিরে যাই। আমাদের মিছিলের ধ্বনি ছিল- ‘ শ্রমিক -কৃষক অস্ত্র ধর, স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক বাংলা কায়েম কর’ এবং ‘সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠায় জনগণের রাষ্ট্র ও ক্ষমতা চাই’, ‘পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি জিন্দাবাদ’, ‘ কেউ খাবে আর কেউ খাবে না, তা হবেনা, তা হবে না’, ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদ, ধ্বংস হোক, নিপাত যাক’, ‘রুশ সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ধ্বংস হোক, ধ্বংস হোক’, ‘কৃষকের হাতে জমি চাই’, ‘জনগণতান্ত্রিক পূর্ববাংলা কায়েম কর’, ‘আমলা-দালাল-পুঁজিবাদ ও সামন্তবাদ ধ্বংস হোক, নিপাত যাক’।
রোদ্দুরে ডট কমে অতিথি লেখক হিসেবে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, কলাম, অনুবাদ, নিবন্ধ ও প্রবন্ধ লেখায় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন পূরবী সম্মানিত, ইভান অরক্ষিত, রনো সরকার এবং রণজিৎ মল্লিক। এছাড়াও আরো অনেকের লেখা এখানে প্রকাশ করা হয়।